
ভূয়া জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করে বিয়ের আয়োজন, মধ্যনগরে ইউএনওর হস্তক্ষেপে বাল্য বিয়ে থেকে রক্ষা পেল ১২বছরের এক শিশু।
ভূয়া জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করে এতে ১৮বছরের ওপরে বয়স দেখিয়ে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের প্রত্যক্ষ এলাকার একটি গ্রামে ১২ বছর বয়সী এক শিশুর বাল্য বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল গতকাল বৃহস্পতিবার (৬জুলাই) বেলা দুইটার দিকে। মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ধর্মপাশা উপজেলার ইউএনও শীতেষ চন্দ্র সরকারের হস্তক্ষেপে ওইদিন এই শিশুটি বাল্য বিয়ে থেকে রক্ষা পেয়েছে।
মধ্যনগর উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকার একটি গ্রামের সৌদি প্রবাসী এক যুবকের (৩৫) এর সঙ্গে একই গ্রামের ১২বছর বয়সী এক শিশুর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা গতকাল বৃহস্পতিবার (৬জুলাই ) বেলা দুইটার দিকে শিশুটির বাড়িতে গোপনে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। ওইদিন দুপুর ১২টার দিকে এক গণমাধ্যম কর্মীর কাছ থেকে এই বাল্য বিয়ের আয়োজনের খবরটি জানতে পারেন ইউএনও শীতেষ চন্দ্র সরকার। তিনি তাৎক্ষনিকভাবে এই বাল্য বিয়েটি বন্ধ করতে মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো,জাহিদুল হককে মুঠোফোনে নির্দেশ দেন। ওসি ওইদিন বেলা দেড়টার দিকে মধ্যনগর থানার এসআই ঈসমাঈল হোসেন ভূঁইয়া ও এএসআই আবদুল আজিমকে ওই শিশুটির বাড়িতে পাঠান। তাঁরা সেখানে গিয়ে এই শিশুটির বাল্য বিয়ের আয়োজনের সত্যতা পান। বাল্য একটি অপরাধ, বাল্য বিয়ের কুফল এ্বং রাষ্ট্রীয় আইনে এ ধরণের বিয়ের কোনো স্বীকৃতি নেই থানা পুলিশের পক্ষ থেকে ওই শিশুটির বাবা ও মা কে এমনটি বুঝিয়ে বলার পর তাঁরা এই বাল্য বিয়েটি বন্ধ করতে সম্মত হন। এমনকি ১৮বছরের আগে তাঁদের মেয়েকে বিয়ে দেবেন না বলে তাঁরা থানা পুুলিশের কাছে মৌখিকভাবে অঙ্গীকার করেন।
মেয়েটির বাবা বলেন, মেয়ের বয়স কম অইলেও দেখতে হুনতে হে বড় অইছে,তাই বিয়ার আয়োজন করছিলাম। মেয়ের বয়স ১৮বছর না অইলে বিয়ে দেওন যাইতনা এইটা আমার জানা আছিইন না।
বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ ( ইউপি) চেয়ারম্যান রাসেল আহমদ বলেন, এ ধরণের কোনো জন্মনিবন্ধন সনদ আমি দিইনি। আমার স্বাক্ষর জাল করে এই শিশুটির ভূয়া জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মধ্যনগর থানার ওসি মো.জাহিদুল হক বলেন, ইউএনও স্যারের নির্দেশে তাৎক্ষনিকভাবে ওই শিশুটির বাড়িতে একজন এসআই ও একজন এএস্আইকে পাঠিয়ে এই বাল্য বিয়েটি বন্ধ করা হয়েছে। আমি এই শিশুটির বাবার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি এই বাল্য বিয়ের আয়োজন করার ভুলটি বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়েছেন। এমনকি ১৮বছরের আগে তিনি তাঁর মেয়েকে বিয়ে দেবেন না বলে আমার কাছে অঙ্গীকার করেছেন। যে জন্মনিবন্ধন সনদটি দেখিয়ে বাল্য বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল সেখানে ওই শিশুটির জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছে ২০০৫সালের ১মে। প্রকৃত পক্ষে ওই শিশুটির বয়স ১২থেকে ১৩বছর হতে পারে।
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ধর্মপাশার ইউএনও শীতেষ চন্দ্র বলেন,বাল্য বিয়ে একটি অপরাধ। এ ধরণের বিয়ে একটি মেয়ের জীবনকে ধ্বংস করে দেয়। গণমাধ্যম কর্মী, মধ্যনগর থানা পুলিশসহ সকলের সমন্বিত প্রচেষ্ঠায় ওই শিশুটি বাল্য বিয়ে থেকে রক্ষা পেয়েছে। বাল্য বিয়ে বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরণের প্রচেষ্ঠা অব্যাহত রয়েছে।