
সিলেটের ওসমানীনগরে ১৭বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে ৮মাসের অন্তঃসত্বা উক্ত কিশোরী অনাগত সন্তানের পিতৃপরিচয়ের জন্য থানায় মামলা করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। এদিকে মামলা তুলে নিয়ে অনাগত সন্তানকে হত্যার মাধ্যমে বিষয়টি আর্থিকভাবে দফার জন্য ক্রমাগত চাঁপ দেওয়া হচ্ছে উক্ত কিশোরী ও তার পরিবারকে। নিরাপত্তা চেয়ে সোমবার (১৯ জুন) দুপুরে ওসমানীনগর উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে করেন নির্যাতিতা কিশোরী ও তার পরিবারের সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানা যায়, উপজেলার নিজ বুরুঙ্গা গ্রামের রাখাল দেবের ছেলে সজু দেব দীর্ঘদিন থেকে প্রতিবেশী ওই কিশোরীকে উত্যক্ত করে আসছিলো। গত বছরের ২০ অক্টোবর ভোরে ওই কিশোরী পূজার ফুল তুলতে সজুদের বাড়িতে যায়। তখন সজু কৌশলে তাকে ঘরে নিয়ে মুখ চেপে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে একাধিকবার কিশোরীকে ধর্ষণ করে সজু। একপর্যায়ে কিশোরী গর্ভবতী হযে পড়লে সাজু তাকে গর্ভপাতপাতের কথা বলে। এ প্রস্তাবে কিশোরী রাজি না হলে সাজু কৌশলের আশ্রয় নেয়। সে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে বুরুঙ্গা বাজার এলাকার কথিত ডাক্তার বাসু দাশকে গর্ভপাতের দায়িত্ব দেয়। বাসু দাশ চেকআপ করার কথা বলে ওই কিশোরীকে তার ফার্মেসীতে ডেকে নেয়। সেখানে অবিবাহিত অবস্থায় সন্তানধারণ, সামাজিক লজ্জা এসব বলে গর্ভপাতের জন্য জোরাজুরি করলে ওই কিশোরী দৌড়ে বাড়ি চলে যায়।
পরবর্তিতে বুরুঙ্গা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দীপংকর দেব সজুর পক্ষ হয়ে নগদ ৫লক্ষ টাকার বিনিময়ে গর্ভপাত ঘটিয়ে বিষয়টি মিমাংসার জন্য কিশোরীর বাবাকে চাঁপ প্রয়োগ করেন। এতে কিশোরীর পরিবার সম্মত না হয়ে টাকা ফিরিয়ে দিলে ইউপি সদস্য শিবু ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের পস্তাতে হবে বলে হুমকি দেন। এঘটনায় পঞ্চায়েতের লোকজন শালিশে বসলে নির্ধারতি দিনে ইউপি সদস্যসহ সজুর পরিবারের কেউ উপস্থিত হননি। পরে পঞ্চায়েতের পরামর্শে ২ মে ওসমানীনগর থানায় সংশ্লিষ্ট আইনে সজুকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন কিশোরীর পিতা। মামলা দায়েরের করলে বিপত্তি বাদে ওই পরিবারের। চলতি মাসের ৬তারিখ রাতে মামলার বাদিকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে কথিত ডাক্তার বাসু দাশের চেম্বারে আটকে রাখা হয়। সেখানে বাসু দাশসহ সজুর ভাই রঞ্জু দেব, দিপংকর দেব শিবু পুনরায় ৫লক্ষ টাকা গ্রহনের মাধ্যমে দায়েরকৃত মামলা তুলে নেয়া এবং কিশোরীর গর্ভপাত করাতে চাপ সৃষ্টি করে নির্যাতন করেন। ঘটনাটি থানায় জানালে সাধারণ ডায়রী করার পরামর্শ দেয় পুলিশ। পুলিশের পরামর্শক্রমে তিনদিন পর নিরাপত্তা চেয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেন নির্যাতিতার পিতা। ডায়েরি দায়েরর পরও নির্যাতনকারীরা অব্যাহত হুমকি প্রদান করছে।
নির্যাতিতা কিশোরী বলেন, আমি চাই আমার গর্ভের সন্তান অন্যদের মতো ভূমিষ্ট হোক। সন্তানের পিতার স্বীকৃতি ও যারা আমার সন্তানকে ভূমিষ্ট হতে বাধা দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আবেদন করছি।
আনিত অভিযোগের ব্যাপারে ইউপি সদস্য দীপংকর দেব শিবু বলেন, আমি চাই মেয়েটি যেন সঠিক বিচার পায়। ৫লক্ষ টাকার বিনিময়ে দফারফার জন্য চাপ দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাকছুদুল আমিন বলেন, মামলার প্রেক্ষিতে আসামী গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নির্যাতিতার পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা দেখছি। অভিযুক্তকে কোন ভাবেই রেহাই দেওয়া হবে না।