//

‘ট্রেনিং শেষ করে আজই বাড়ি ফিরব’

24 mins read

স্বামী-স্ত্রী দুজনই সরকারি চাকরিজীবী। শুক্র ও শনিবার ছুটি থাকায় তারা বেড়াতে যান নিজ বাড়ি বাগেরহাট। তবে এই সপ্তাহে দু’জন নয়। স্ত্রীকে রেখে একাই গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন অনাদি রঞ্জন মজুমদার (৫৫)।

রবিবার (১৯ মার্চ) সকালে ঢাকায় একটি প্রশিক্ষণে যোগ দিতে গোপালগঞ্জ থেকে বাসে ওঠেন তিনি। পথে মাদারীপুরের শিবচরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।

অনাদি রঞ্জন মজুমদার গোপালগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক (ডিডি)। তার স্ত্রী অনিতা দত্ত ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষক।

দুর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে বেলা ১১টার দিকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন অনিতা দত্ত। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ছেলে অর্ণব মজুমদার। স্বামীর লাশ শনাক্তের পর ভেঙে পড়েন তিনি। আহাজারি করতে করতে অনিতা দত্ত বলেন, ‘সকালেও ফোনে কথা হলো। বলল, ঢাকায় ট্রেনিং শেষ করে আজই বাড়ি ফিরে আসব। এমন হবে জানলে ঢাকায় যেতে দিতাম না। আমার সুখের সংসারে আর সুখ রইল না।’

বাবার এমন মৃত্যু কোনো ভাবেই মানতে পারছেন না ছেলে অর্ণব। তিনি বলেন, ‘কিছু বলতে পারছি না আমি। বাবার চেহারা দেখার পর দম বন্ধ হয়ে আসতেছে। ঈশ্বর আমাকে এমন দিন দেখাল কেন?’

পুলিশ জানায়, রবিবার (১৯ মার্চ) সকালে খুলনা থেকে যাত্রী নিয়ে ইমাদ পরিবহনের একটি বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। পদ্মাসেতুর আগে ঢাকা-খুলনা এক্সপ্রেসওয়ের মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় বাসটির সামনের একটি চাকা ফেটে যায় এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ১৪ জন নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় অন্তত ২৯ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পাঁচ্চর রয়েল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২ জন ও শিবচরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

এদিকে নিহত ২০ জনের মধ্যে ১৭ জনের পরিচয় জানা গেছে। বাকি তিন জনের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। নিহতরা হলেন, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার হিতডাঙ্গা গ্রামের সৈয়দ মুরাদ আলীর ছেলে মো. ইসমাইল(৩৮), গোপালগঞ্জের গপিনাথপুর গ্রামের হেদায়েত মিয়া বাহার(৪২), নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কালনা গ্রামের বকু সিকদারের ছেলে ফরহাদ সিকদার(৩০), গোপালগঞ্জের পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক অনাদী রঞ্জন মণ্ডল(৪২), গোপালগঞ্জ সদরের বনগাঁও এলাকার সামছুল শেখের ছেলে মোস্তাক শেখ(৩০), গোপালগঞ্জ সদরের ছুটকা গ্রামের নশর আলী শেখের ছেলে সজিব শেখ(২৬), গোপালগঞ্জ সরদরের পাঁচুরিয়া গ্রামের মাসুদ মিয়ার মেয়ে সুইটি আক্তার(২২), গোপালগঞ্জর টুঙ্গিপাড়ার নিলফা গ্রামের কাঞ্চন শেখের ছেলে কবির শেখ, গোপালগঞ্জ সদরের আবু হেনা মস্তফার মেয়ে আফসানা মিমি(২০), গোপালগঞ্জ মুকসুদপুরের আদমপুরের আমজাদ আলী খানের ছেলে মাসুদ খান(৩২), খুলনার সোনাডাঙার শেখ আহমেদ আলী খানের ছেলে শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন(৪২), খুলনার চিত্তরঞ্জন মণ্ডলের ছেলে চিন্ময় প্রসন্ন মন্ডল, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার পরিমল সাধুর ছেলে মহাদেব কুমার সাধু, খুলনার টুটপাড়ার শাজাহান মোল্লার ছেলে আশরাফুল আলম লিংকন, সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার সখীপুর গ্রামের আমজেদ আলী সরদারের ছেলে রাশেদ সরদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার অনন্তপুর গ্রামের আলী আকবরের ছেলে জাহিদ ও গোপালগঞ্জ সদরের পুরান মানিকদি গ্রামের ইমাদ বাসের সুপারভাইজার মিনহাজ বিশ্বাস(২২)।

নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে লাশ দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আর আহতদের চিকিৎসার জন্য ৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ জানতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা করেছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’

মাদারীপুর রিজিওনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হাইওয়ের ডিআইজি সালমা বেগম বলেন, এ দুর্ঘটনায় ২০জন নিহত হয়েছেন। এতে ঘটনাস্থলেই ১৪জন নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় অন্তত ২৯জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পাঁচ্চর রয়েল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Latest from Blog

x
English version