এলিজা বিনতে এলাহি : : ইন্টারনেটের যুগে জিউসের ছবির সঙ্গে সবাই মোটামুটি পরিচিত। তারপরও গ্রীসের প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে বিশাল ব্রোঞ্জের জিউসকে দেখে ‘আহা জিউস’ শব্দটি মনের অজান্তেই বেরিয়ে গেল। আমার সফরসঙ্গী কেউ ছিল না, তাই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করার সুযোগ পাচ্ছিলাম না। সুতরাং নিজের সঙ্গে নিজেকে কথা বলতে হচ্ছিল।
এই ব্রোঞ্জের মূর্তিটি নিয়ে প্রত্নতত্ত্ব এবং ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে। অনেকে মনে করেন, এটি দেবতা জিউসের; আবার কারো কারো ধারণা এটি পসেইডনের অবয়ব। পৌরাণিক ইতিহাস বলে দেবতা জিউস এবং পসেইডনের পৃথিবী পরিচালনার ক্ষমতা ও অধিকার একই রকম ছিল। আকাশ পরিচালনা করতেন জিউস আর সমুদ্র পসেইডন।
এথেন্স শহরের স্থানীয়রা মনে করেন, ব্রোঞ্জের মূর্তিটি দেবতা জিউসের প্রতিকৃতি। গ্রিসের ইভিয়া দ্বীপে এটি পাওয়া যায়, যার নির্মাণকাল খ্রিস্টপূর্ব ৪৩০ অব্দ।
প্রাচীন সময়ে মানুষের চিন্তা, উপলব্ধি কিংবা বিশ্বাস কেমন ছিল, তা জানা যায় মিথলজির মাধ্যমে। মিথলজির বাংলা অর্থ ‘পুরাণশাস্ত্র’। মিথলজি নিয়ে কথা বলতে গেলেই প্রথমে মাথায় আসে রোমান এবং গ্রিক মিথলজি। তবে এর মাঝে গ্রিক মিথলজি পুরো পৃথিবীব্যাপী সর্বাধিক পরিচিত, আলোচিত এবং পঠিত।
আমরা বর্তমানে যে গ্রিক মিথলজির কথা বলি বা জানি, তা কবিদের সৃষ্টি। হোমারের হাত ধরেই মূলত এর যাত্রা শুরু হয়। এর রচনাকাল ছিল খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ১ হাজার বছর। গ্রিক পুরাণের প্রথম লিখিত প্রমাণটি হলো ‘ইলিয়াড’।
টাইটানগণ ছিলেন এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবকিছুর সর্বাধিকারী। তাদের শক্তি ছিল অবিশ্বাস্য। তারা সংখ্যায় ছিলেন অনেক। তবে তাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন ‘ক্রনাস’। তিনি টাইটানদের শাসনকর্তা ছিলেন। তবে পরবর্তীতে তাকে পরাজিত করে সকল ক্ষমতার অধিকারী হন তার পুত্র ‘জিউস’।
যে সকল দেবতারা টাইটানদের উত্তরসূরি হিসেবে এলেন, তাদের মধ্যে বারোজন ছিলেন অন্যতম। তারা সকলে বাস করতো পৃথিবীর সকল পর্বতশৃঙ্গ থেকে উচ্চতম স্থানে। এর নাম ছিল অলিম্পাস। অলিম্পাসে বসবাসের কারণে তাদের বলা হতো অলিম্পীয়।
প্রাচীন পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটি অলিম্পিয়ার জিউসের মূর্তি। গ্রিকদের অসংখ্য দেব-দেবীর মধ্যে প্রধান দেবতা হলেন জিউস। জিউস বিখ্যাত হারকিউলিসের পিতা।
গ্রিকরা অলিম্পিয়া নগরীতে একটি মন্দির নির্মাণ করে এবং পরে সেখানেই স্থাপন করা হয় দেবতা জিউসের বিশালাকার মূর্তি। গ্রিক ভাস্কর ফিডিয়াস খ্রিস্টপূর্ব ৪৩২ অব্দে জিউসের মূর্তিটির নকশা করেছিলেন। মূর্তিটি উচ্চতায় ছিল প্রায় ৪০ ফুট।
জানা যায়, মূর্তিটি তৈরি করতে সময় লাগে দীর্ঘ ১২ বছর। কথিত আছে- সোনা, মূল্যবান পাথর এবং হাতির দাঁতে তৈরি মূর্তিটি একটি কাঠের কাঠামোর উপর ছিলো।
ভাস্কর্যতে দেখা যায়, দেবতা জিউস একটি কাঠের উপর উপবিষ্ট আছে যেখানে তার ডান হাতে আছে একটি ছোট মূর্তি যা নির্দেশ করছে জিউসের জয় এবং জৌলুস। অপরদিকে তার সিংহাসনের বাম দিকে আছে একটি ঈগল যা নির্দেশ করছে জিউসের শক্তি ও তার প্রতি আনুগত্য। ইতহাস বলে রোমানরা মুর্তিটি ধ্বংস করে। আরও অনেক প্রাচীন সপ্তাশ্চর্যের মত এই মুর্তিও কালের গর্ভে হারিয়ে যায়।
গ্রীসের প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর দেখবার সময় আমি ভাবছিলাম মাউন্ট অলিম্পাসের গল্প যেমন আমরা পৌরণিক উপকথা হিসেবে জানছি বা পড়ছি, পৃথিবী নামক গ্রহের ইতিহাসও একদিন মিথলজির অংশ হয়ে উঠবে না, একথা কি হলপ করে বলা যায় !