
ধর্মপাশায় জেলেদেরকে মারধর করে দুই হাত রশি দিয়ে বেধে নগদ টাকাসহ বিভিন্ন মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় থানায় ডাকাতির মামলা, ১১টি গরু উদ্ধার ৷
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের ধানকুনিয়া জলমহালের অস্থায়ী খলাঘর (জেলেদের বসবাসের জন্য নির্মিত ঘর) এলাকায় ঢুকে নারীপুুরুষসহ ১৪জন জেলেকে মারধর করে তাঁদেরকে হাত রশি দিয়ে বেধে খলাঘরের ভেতর থেকে নগদ টাকা, শুটকিমাছসহ বিভিন্ন মালামাল ডাকাতেরা ডাকাতি করে নিয়ে গেছে।
গত শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে রাত তিনটার মধ্যে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক সাহাজীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও ধানকুনিয়া জলমহালের মৎস্য আহরণের কাজের নিয়োজিত জেলেদের সর্দার বাদল দাস (৪০) বাদী হয়ে রবিবার রাতে অজ্ঞাতনামা ১৫/২০জনকে আসামি করে ধর্মপাশা থানায় একটি ডাকাতির মামলাটি করেছেন।
ধর্মপাশা থানা পুলিশ, ভুক্তভোগী কয়েকজন জেলে ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের ধানকুনিয়া জলমহালটি জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপানাধীন। এই জলমহালটি ১৪২৫থেকে ১৪৩০ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত ছয় বছরের জন্য ধানকুনিয়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিডিটেডের পক্ষে ইজারা পায় ওই সমিতির সভাপতি সভাপতি মোহন মিয়া। উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের বাবুপুর গ্রামের রফিকুল বারী চৌধুরী বাচ্ছু জলমহালটির যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করিয়া আসছেন। জলমহালটি থেকে মাছ আহরন বাবদ বিক্রিত মাছের শতকরা ২৫ টাকা জেলেদেরকে দেওয়ার শর্তে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক সাহাজীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জেলে সর্দার বাদল দাসের(৪০) সঙ্গে জলমহালটির পরিচালকের চুক্তি হয়। জেলেদের বসবাসের জন্য প্রায় ছয়মাস আগে ধানকুনিয়া জলমহালের পাড়ে অস্থায়ীভাবে পাঁচটি খলা ঘর ও একটি গরুর ঘর নির্মাণ করা হয়। জেলে সর্দারের নেতৃত্বে সেখানে ১৮জন নারী পুরুষের একটি জেলে দল জলমহালটিতে মাছ শিকারের জন্য আসেন। মাছ শিকার কাজ প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ায় চারজন জেলে নিজদের বাড়িতে চলে গেছেন।
গত ১৫মার্চ মৎস্য আহরণ বাবদ জলমহালটির পরিচালকের কাছ থেকে ১লাখ ৪০হাজার টাকা বুঝে পান জেলে সর্দার বাদল দাস। এই টাকার মধ্যে ১৬হাজার টাকা বিভিন্ন ভাবে খরচ হয়ে যায়। বাকি টাকা জেলেদের সর্দার তাঁর বড় ভাইয়ের স্ত্রী গীতা রানী দাসের(৪০) কাছে রেখে দেন। গীতা ওই টাকা তাঁর শয়নকক্ষের একটি ট্যাংকের মধ্যে রাখেন।
গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ১৫/২০ জনের একটি মুখোশদারী ডাকাতদল দা, রামদা, চুরি, লোহার পাইপ ও বাঁশের লাঠি নিয়ে ধানকুনিয়া খলাঘর এলাকায় ঢুকে প্রথমে পাহারাদার ও পরে খলাঘরের ভেতরে থাকা জেলে সর্দারসহ ১৪জনের হাত রশি দিয়ে বেধে ফেলে মারধর শুরু করে। এ সময় ডাকাতেরা খলাঘরে থাকা জেলেদের পাঁচমণ শুকটি মাছ, সাতটি মোবাইল, নগদ একলাখ ২৪ হাজার টাকা. ১২টি গরু, একটি সৌর বিদ্যুতের ব্যাটারিসহ ৬লাখ ৭৩হাজার টাকার মালামাল ডাকাতেরা লুটে নিয়ে যায়।
বিষয়টি শনিবার সকালে থানা পুলিশকে মৌখিক ভাবে জানানো হয়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে রবিবার বেলা দেড়টার দিকে উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের চিতলিয়া হাওরের মধ্যবর্তী স্থানে সরকারি খাস জায়গায় ঘাস খাওয়ারত অবস্থায় সেখান থেকে ১১টি গরু উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
জেলে সর্দার বাদল দাস বলেন, রামদা, দাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ১৫/২০ জনের মুখে কালোকাপড় পড়া মুখোশধারী একটি ডাকাত দল আমাদের খলাঘর এলাকায় থাকা আমিসহ ১৪জনকে মারধর করে সবার দুই হাত রশি দিয়ে বেধে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় সাত লাখ টাকার মালামাল ডাকাতেরা নিয়ে গেছে। আমরা কাউকে চিনতে পারিনি। এ ঘটনায় রবিবার রাতে আমি বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ধর্মপাশা থানার এসআই মো.আমিনুর রহমান বলেন, ডাকাতি করে নিয়ে যাওয়া ১২টি গরুর মধ্যে ১১টি গরু উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। ডাকাতি হওয়া মালামাল উদ্ধার ও ডাকাতদের সনাক্ত করে তাঁদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।