
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার বাদশাগঞ্জ বেইলি সেতুটির একাংশের পাটাতন সরে গিয়ে পাটাতনের ফাঁকে ইটবোঝাই করা ট্রাকের চাকা ঢুকে পড়ায় ধর্মপাশা-মধ্যনগর সড়কে বৃহস্পতিবার (১০আগস্ট) সকাল ছয়টা থেকে সেতুটির ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ ছিল।এতে করে ধর্মপাশা ও মধ্যনগর এই দুই উপজেলার মানুষজনকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। টানা সোয়া আটঘণ্টা পর ওইদিন বেলা সোয়া দুইটার দিকে সেতুটির ওপর দিয়ে পুনরায় যানচলাচল শুরু হয়েছে।
নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) কার্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫সালের ১১আগস্ট থেকে ধর্মপাশা উপজেলার সওজের যাবতীয় কার্যক্রম নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে রয়োছে।ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ ও পাইকুরাটি ইউনিয়নের মধ্যবর্তী মনাই নদীর ওপর ১৯৯১সালে বাদশাগঞ্জ বেইলি সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এই সেতুটির ওপর দিয়ে ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার মানুষজন চলাচল করে । এটির ওপর দিয়ে ট্রাক, মোটরসাইকেল, পিকআপ, সিএনজি, অটোরিকশাসহ গড়ে দৈনিক দুই সহস্রাধিক যান বাহন চলাচল করে। বৃহস্পতিবার সকাল ছযটার দিকে উপজেলার পাইকুরাটি বাজারের উদ্দেশ্যে ইট বোঝাই ভর্তি একটি ট্রাক বাদশাগঞ্জ বেইলি সেতুটির ওপর দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় সেতুটির একটি পাটাতন সরে গিয়ে পাটাতনের ফাঁকা স্থানে ট্রাকের চাকা ঢুকে পড়ায় ট্রাকটি হেলে পড়ে। ফলে সেতুটির ওপর দিয়ে যানচলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ওইদিন বেলা সোয়া দুইটার দিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর সহায়তায় ট্রাকের লোকজন সেতুর ওপর পাটাতনের ফাঁকে ঢুকে পড়া ট্রাকের চাকাসহ ট্রাকটি উদ্ধার ও সরে যাওয়া পাটাতনটি তুলে তা পাটাতনের সঙ্গে একত্র করে দেন। এর পর পরই যান চলাচল শুরু হয়ে যায়।
উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের বাদশাগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী ও সেলবরষ ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হামিদুল ইসলাম রতন বলেন, এই বেইলি সেতুটিতে প্রায়ই পাটাতন সরে গিয়ে মানুষজন হতাহত হয়। কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনা কাজ হয়না। সেতুটি দেখার যেন কেউ নেই। সেতুর পাটাতনের ফাঁকে ট্রাকের চাকা ঢুকে পড়ায় যান চলাচল বন্ধ থাকার সোয়া আটঘণ্টা পর আবার যানচলাচল শুরু হয়েছে। নেত্রকোনা সওজ থেকে তিনজন লোক এসে বিকেল চারটা থেকে পাটাতন জোড়ালাগানোসহ অন্যান্য কাজ শুরু করেছেন।কাজ শেষ হতে আরও বেশ কয়েকঘণ্টা সময় লাগবে।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার মোহনগঞ্জ পৌর শহরের বাসিন্দা দেবল চন্দ্র পোদ্দার বলেন,আমি মধ্যনগর উপজেলার চামরদানী উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক পদে কর্মরত আছি। মোটরসাইকেল যোগে নিয়মিত এই বেইলি সেতুটির ওপর দিয়ে আমাকে কলেজে আসা যাওয়া করতে হয়। সেতুটির পাটাতন সরে যাওয়ায় এবং পাটাতনের স্থানে ট্রাকের চাকা ঢুকে পড়ায় সেতুর উত্তরপাড়ে মোটর সাইকেল রেখে ভাড়াটো মোটর সাইকেলে করে স্কুলে যেতে হয়েছে।
উপজেলার সেলবরষ ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফরিদ খোকা বলেন, এই বেইটি সেতুটির ওপর দিয়ে নিয়ম নীতি না মেনে অতিরিক্ত মালবোঝাই করা ট্রাক চলাচল করে।এ নিয়ে কথা বলেও কোনো কাজ হয় না। সেতুটির পাটাতনগুলো ফাঁকা ফাঁকা ও সেতুটির একটি অংশ বাঁকা হয়ে গেছে। এ অবস্থায় যেকোনো সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শীতেষ চন্দ্র সরকার বলেন,আমি খবর পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাটি নেত্রকোনার সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়েছি।
নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আল নূর সালেহীন বলেন, আমাদের কার্যালয় থেকে ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হয়েছে। এই সেতুটির পাটাতন জোড়া লাগানো ও মেরামত কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যেই শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।