ধর্মপাশার নয়টি হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের ১৫৭টি প্রকল্পের মধ্যে ১০৫টি প্রকল্পের কাজ চারদিন ধরে বন্ধ, চিন্তিত কৃষকেরা

32 mins read

ধর্মপাশার নয়টি হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের ১৫৭টি প্রকল্পের মধ্যে ১০৫টি প্রকল্পের কাজ চারদিন ধরে বন্ধ, চিন্তিত কৃষকেরা

ধর্মপাশা হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ পুননির্মাণ ও মেরামত কাজের জন্য বরাদ্দকৃত দ্বিতীয় কিস্তির টাকা না আসায় সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার নয়টি হাওরের ১৫৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজের মধ্যে ১০৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ গত সোমবার (৭ফেব্রুয়ারি) থেকে বন্ধ রয়েছে।

হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি ও সদস্য সচিবেরা জানিয়েছেন, প্রকল্পের প্রথম কিস্তির টাকা তাঁরা মাসখানেক আগে পেয়েছেন। বাঁধের কাজ করায় সেই টাকা বেশ আগেই শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাওয়ার সময় অতিবাহিত হলেও এখনো তা এসে পৌঁছায়নি। এ অবস্থায় ধারধেনা করে সপ্তাহ খানেক সময় তাঁরা বাঁধের কাজ করেছেন। কিন্তু এখন আর সম্ভব হচ্ছে না। তাই নিরুপায় হয়ে তাঁরা বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বোরো ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করা না সম্ভব না হলে অকাল বন্যায় হাওরের ফসলডুবির আশঙ্কা প্রকাশ করছেন হাওরপাড়ের কৃষকেরা।

উপজেলা প্রশাসন ও এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল , সোনামড়ল, ধানকুনিয়া, ঘোড়াডোবা, গুরমা, গুরমা বর্ধিতাংশ , রুই বিল ,কাইলানী , জয়ধনা এই নয়টি হাওর সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ( পাউবোর) অধীনে। এই নয়টি হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধের প্রকল্প কাজের সংখ্যা ১৫৭টি। আর এ জন্য বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০কোটি ৩০লাখ টাকা। চারটি কিস্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির ( পিআইসির) সভাপতি ও সদস্য সচিবকে তাঁদের নিজ নিজ প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দকৃত টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের প্রকল্প কাজ বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের কাজ গত বছরের ৩০নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও নানাবিদ কারণে তা শেষ হয়েছে চলতি বছরের ১১জানুয়ারি । ১৫ডিসেম্বরের মধ্যে বাঁধের প্রকল্প কাজ শুরু করে তা চলতি বছরের ২৮ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে। এ উপজেলায় গত বছরের ১৫ডিসেম্বর ধানকুনিয়া হাওরের একটি প্রকল্প কাজ শুরু করার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাঁধের উদ্বোধন করা হয়।

বাঁধের সবকটি প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের ১৫জানুয়ারি থেকে পুরোদমে শুরু হয়। প্রথম কিস্তি বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয় সাত কোটি ৫৭লাখ টাকা। দ্বিতীয় কিস্তির জন্যও প্রয়োজন সাত কোটি ৫৭লাখ টাকা। সরোজমিনে গত বুধবার (৯ফেব্রিুয়ারি) ও বৃুহস্পতিবার (১০ফেব্রুয়ারি) উপজেলার এই নয়টি হাওর ঘুরে ও এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলা জানা গেছে, দ্বিতীয় কিস্তির টাকা না আসায় অর্থাভাবে উপজেলার নয়টি হাওরের ১৫৭টি প্রকল্পের মধ্যে ১০৫টি প্রকল্পের কাজ সোমবার (৭ফেব্রুয়ারি) থেকে বন্ধ রয়েছে।। যে সব প্রকল্পগুলোতে এখনও কাজ চলমান রাখা হয়েছে সেগুলোতে হাতে গোনা শ্রমিকদেরকে কাজ করতে দেখা গেছে। উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল হাওরের ৮২নং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) কমিটির সভাপতি মো.আবু নায়ূম বলেন, ৫৫০মিটার বাঁধের ভাঙা অংশ বন্ধ করণ ও বাঁধ পুন নির্মাণের জন্য কাজের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৩লাখ ৭৮হাজার ৪৮৫টাকা । প্রথম কিস্তিতে বরাদ্দের শতকরা ২০ভাগ টাকা পেলেও অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। বেশ কিছুদিন ধরে ধারদেনা করে বাঁধের কাজ করেছি। এখন আর পারছিনা।

দ্বিতীয় কিস্তির টাকা না পাওয়ায় গত সোমবার থেকে আমি নিরুপায় হয়ে বাঁধের প্রকল্প কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। ধানকুনিয়া হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের ২নং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসির) সভাপতি আজিজুর রহমান বলেন, আমাদের কাজে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৫লাখ ৮৭হাজার ৩২৯টাকা। বাঁধের ধৈর্ঘ ৭৪৮মিটার। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা না পাওয়া কাজটি আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।। দ্রুত দ্বিতীয় কিস্তির টাকা প্রদানে যথাযথ ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা সমাজসেবক শাহ জামাল বলেন, ধীরগতিতে বাঁধের কাজ চলছে । তাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। এতে বোরো ফসলক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। কারও গাফিলতিতে বা উদাসীনতার কারণে এ উপজেলায় হাওরের ফসলডুবির ঘটনা ঘটলে প্রকল্প কাজের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ঠরা কেহই রেহাই পাবেন না। হাওর বাঁচাও আন্দোলনের ধর্মপাশা উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক কৃষক আলা উদ্দিন বলেন, টাকার অভাবে ফসলরক্ষা বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ বন্ধ থাকার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখ ও হতাশাজনক। কর্তৃপক্ষ দ্রুত এ সমস্যা সমাধানে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব এবং সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো.ইমরান হোসেন বলেন, প্রথম কিস্তিতে যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল দ্বিতীয় কিস্তিতেও একই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজলো নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান বলেন, দ্বিতীয় কিস্তির টাকার জন্য পিআইসিদের কাছ থেকে প্রচুর পরিমানে আমি ফোন পাচ্ছি। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা না পাওয়ায় বাঁধের কাজের গতি অনেকটাই কমে গেছে। টাকা ছাড়করণের জন্য ইতিমধ্যে সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছি।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এখনো বরাদ্দের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা ছাড়করণ হয়নি। আমরা এ নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছি। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Latest from Blog

x
English version