
নারীর চলাচলে স্বাচ্ছন্দ্য আনে স্কুটি ঝুঁকি কম, বাঁচে সময়
প্রতিদিন সকালে মিরপুর এক নম্বর থেকে জজকোর্টে আসতে আইনজীবী সুমনা হক তিথির দেড়-থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগত। আর ফিরে যেতে লাগত পাক্কা সাড়ে তিন ঘণ্টা। আর এখন তিনি স্কুটিতে যান এক ঘণ্টার মধ্যে। এতে তার অনেক সময় বেঁচে যায়। তিথি জানান ,তার যে শুধু সময় বাঁচে তা নয়, গণপরিবহনে চলাচলে যে ঝুঁকি-ঝামেলা ছিল তা এখন আর নেই।
তিথি রাস্তায় স্কুটি নিয়ে বের হওয়ার আগে শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ড্রাইভিং কোর্স সম্পন্ন করেছেন। পাঁচ বছর ধরে শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দের্র কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে স্কুটি ড্রাইভিং। এরপর থেকে বাড়ছে নারীদের এই প্রশিক্ষণের প্রতি আগ্রহ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাস্তায় স্কুটি চালাতে একটি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জরুরি। কারণ এখানে ট্রাফিক আইন , রাস্তায় চলাচলের নিয়ম ও বিভিন্ন সিগন্যাল সম্পর্কে হাতে কলমে শেখানো হয়। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে।
কারা শিখছেন: ইডেন মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স পড়ছেন মেহজাবিন। প্রতিদিন সকালে আসেন রাজধানীর টেকনিক্যাল মোড়ে স্কুটি চালানো শিখতে। মেহজাবিন বলেন, ‘মেয়েদের জন্য স্কুটি খুব নিরাপদ। তাই আমি আমার যাতায়াতের জন্য স্কুটি শিখছি।’ ইশরাত জাহান একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। করোনার পরে তার সন্তানকে স্কুলে নিতে খুব বেগ পেতে হয়। কারণ সকালবেলা রিকশা পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও প্রায় নানা গন্ডগোল হয়। ইশরাত তখন স্কুটি চালানো শেখা শুরু করেন।
তিনি জানান, ‘সন্তানকে স্কুলে নেওয়ার জন্য স্কুটি চালানো শিখেছি, কিন্তু এখন আমি অফিসসহ সব যাতায়তাতে স্কুটি ব্যবহার করছি। বাসে যে ঘটনাগুলো ঘটে তা থেকে স্কুটি মেয়েদের মুক্তি দেয়।’ যে কেউ স্কুটি চালাতে পারলেও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেন শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে গৃহিণী, শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী নারীরা আগ্রহ নিয়ে শিখছেন স্কুটি চালানো।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান রাস্তায় মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য স্কুটি চালানোকে কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করেন। স্কুটি বিভাগের সহকারী প্রশিক্ষক হারুন অর রশিদ জানান, তাদের ২৫টি আসনে প্রথম শিক্ষার্থী পাওয়া যেত না। আজ পাঁচ বছরে এসে দেখা গেছে আসন পূর্ণ করেও দুই একজন বেশি থাকে। তারা দুই বেলা প্রশিক্ষণ দেন। তবে বিকাল পর্যন্ত যে কেউ চাইলে অনুশীলন করতে পারেন। তাদের স্কুটি শিক্ষার্থী এখন রাস্তায় আছেন। কেউ কেউ এই স্কুটি চালানোকে পেশায় নেওয়ার কথাও ভাবছেন। তবে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ও নারী তাদের দৈন্দিন জীবন সহজ করতে এই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এখানে শিখতে ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি পাশ ও ১ হাজার ৫০০ টাকা প্রশিক্ষণ ফি লাগে। সাধারণত নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির বেশ শিক্ষার্থী পান তারা। এই পাঁচ বছরে ৩০০ জন শিক্ষার্থী তাদের প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করেছেন। শিক্ষার্থীদের প্রথমে কয়েক দিন সাইকেল চালানো শেখানোর পর স্কুটি দেওয়া হয়।
২০ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন রেহানা সুলতানা। তিনি এখন এই কোর্সের প্রধান প্রশিক্ষক। রেহানা জানান, তিনি ছেলেবেলা থেকে সাইকেল ও মোটরসাইকেল চালানো শিখেছেন। প্রতিষ্ঠানের প্রধান অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান বলেন,বর্তমান সময়ে শহরের নারীর জন্য স্কুটি জরুরি মনে করেই জনশক্তি কার্যালয় থেকে অনুমতি ক্রমে এই শিক্ষা কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করি। এখানে অর্থনৈতিকভাবে একটু দুর্বল শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আসেন। সবাই পুরো কোর্স ফিও দিতে পারেন না। তাতেও তাদের শিক্ষা আটকায় না। তাদের আগ্রহ বেশি হওয়ার খুব তাড়াতাড়ি শিখে নেন।