/

নিরাপদ সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চাই

38 mins read


সিলেট-তামাবিল সড়কের জৈন্তাপুর উপজেলা অংশে ২ এপ্রিল সকাল সাড়ে ছয়টায় ও রাত ১ টায় পৃথক দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত হয়েছেন । এ ঘটনায় পুরো জৈন্তায় শোকের ছায়া নেমে আসে। কিন্তু দুঃখের বিষয় যারা এই দুর্ঘটনার মুল হোতা ট্রাক চালক তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে কোন প্রকার শোক প্রকাশ করা হয়নি। অথচ তাদের স্বার্থ পরিপন্থী বৈধ কোন ব্যাপারে তারা ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে।
সিলেট -তামাবিল রাস্তায় ৮ জনের মৃত্যুর পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই সোচ্চার হয়েছেন সিলেট-তামাবিল সড়কে কিভাবে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। কেউ কেউ বিভিন্ন জায়গায় স্পিড ব্রেকার দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। অনেকেই মনে করেন ট্রাক চালকদের অদক্ষতার কারণে এই দুর্ঘটনা, আবার কেউ কেউ টোকেন চালিত সি,এন,জি অটোরিকশা কে দায়ী করছেন।
আমার মতে সিলেট তামাবিল সড়কে প্রায় প্রতিদিনই যে সকল দুর্ঘটনা ঘটে তার প্রায় ৯৫ ভাগই ঘটে চালকদের অদক্ষতার কারণে। এই রাস্তায় যে সকল যানবাহন চলাচল করে তার প্রায় শতভাগই ফিট। কারণ যাত্রীপরিবহনের জন্য লক্কর ঝক্কর কোন যানবাহনে এখন আর মানুষ উঠেন না।
পার্শ্ব রাস্তা থেকে প্রধান সড়কে ওঠার নিয়ম হলো-প্রথমে প্রধান সড়কের গাড়িকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, তারপর ডানে-বামে দেখে ইন্ডিকেটর জ্বালিয়ে হর্ন বাজিয়ে প্রধান সড়কে উঠতে হবে। অনেক চালক কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে সাইড রোড থেকে প্রধান সড়কে উঠে যায়, ফলে দুর্ঘটনার শিকার হয়।
আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন সিলেট তামাবিল সড়কে বেশিরভাগ সিএনজি ও লেগুনা চালকের লাইসেন্স নাই। অপ্রাপ্ত বয়স্ক, অদক্ষ এসকল চালকের কারণে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটে। বাস মিনিবাস চালকের মধ্যে কিছু সংখ্যক চালক রয়েছেন যারা খুবই বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান এবং স্টিয়ারিং এ বসে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে।
আমাদের জৈন্তাপুর এ অবৈধ পশু ও মালামাল পরিবহন এর কাজে কিছু ডি, আই ট্রাক রয়েছে সেগুলোর চালকরা যে কি পরিমাণ বেপরোয়া তা সবাই জানেন। বেশির ভাগ অপ্রাপ্ত বয়স্ক এ সকল চালকের লাইসেন্স নাই, এদের আচরণ তাদের যাত্রীদের মতো। এদের কারণে দিনে রাতে মেইন রোড, ফাড়ি রাস্তা সব জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটে।
এই সড়কে আরেকটি ভয়ংকর যানবাহন ইমা- লেগুনা। অতিরিক্ত যাত্রীবহন ও অদক্ষ চালকের কারণে এই বাহনটি প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটায়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক রা প্রায়ই মোবাইল ফোন চালিয়ে গাড়ি চালায় এবং সিড়িতে লটকিয়ে যাত্রী পরিবহণ করে।
সিলেট তামাবিল সড়কে সবচেয়ে আতঙ্কের নাম ট্রাক। এই ঘাতক যানবাহন কত যে প্রাণ কেড়ে নিয়েছে তা সবার জানা। এসকল ট্রাকের অনেক চালকের লাইসেন্স নাই। কেউ কেউ আবার হেল্পার দিয়ে গাড়ি চালান। দুই তিন রাত নির্ঘুম থেকে অনেকেই গাড়ি চালিয়ে যান। আবার কেউ কেউ নেশা গ্রস্থ হয়ে স্টিয়ারিং এ বসেন বলে অভিযোগ আছে। এদের কারণে প্রতিবছর অনেকে স্বজনহারা হোন।
এই মহাসড়কে দুর্ঘটনার আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো অটোরিকশা, অটোবাইক। এসকল বাহন ফাড়ি রাস্তা থেকে মুল রাস্তায় উঠার সময় প্রায়ই দুর্ঘটনা কবলিত হয়।
বর্তমানে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা অনেকাংশে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে উঠতি বয়সি ছেলেরা বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালানোর ফলে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। মোটরসাইকেলে হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক; অথচ অনেকে হেলমেটবিহীন, আবার অনেকে দুজন যাত্রীসহ মোটরসাইকেল চালানোর ফলে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।

দুর্ঘটনা এড়াতে করণীয় সম্পর্কে কিছু পরামর্শঃ
অনেকেই রাস্তায় স্পিড ব্রেকার দেওয়ার কথা বললেও আমি স্পিড ব্রেকার এর পক্ষে নয়। স্পিড ব্রেকার অনেক সময় দুর্ঘটনার কারণ হয়। কিছুদিন পুর্বে সিলেট -তামাবিল সড়কের দামড়ি নামক স্থানে একটি স্পিড ব্রেকার এ বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে। পরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমদ এর নির্দেশে এই স্পিড ব্রেকার উঠানো হয়। প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার এলাকা চিহ্নিত করে র‌্যাম্বল স্পিড বসাতে হবে। ছোট ছোট করে ৭/৮ টি র‌্যাম্বল স্পিড দিলে গাড়ী চালানোর সময় চালকরা একটু ঝাকুনি অনুভব করবে, এতে করে তারা সর্তক হবে যে সামনে দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকা। তাই স্পিড ব্রেকারের চাইতে র‌্যাম্বল স্পিড বেশি কার্যকরী। এছাড়া র‍্যাম্বল স্পিড এর উপর রোড স্টাড ও বসানো যেতে পারে।
সকল পার্শ্বরাস্তার মুখে উভয় পাশে চিহ্ন দিয়ে বুঝাতে হবে সামনে পার্শ্ব রাস্তা, মুল রাস্তার চালকরা যাতে সহজেই বুঝতে পারে সামনে পার্শ্ব রাস্তা রয়েছে। মুল রাস্তায় উঠার মুখে পার্শ্ব রাস্তায় ও র‍্যাম্বল স্পিড দিতে হবে। পার্শ্ব রাস্তা এবং মুল রাস্তার সংযোগ স্থানে উভয় পাশের সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে।
অবশ্যই সকল চালকের লাইসেন্স থাকতে এবং বাহনের ফিটনেস থাকতে হবে। লাইসেন্স ও ফিটনেস ছাড়া যাতে কেউ গাড়ি চালাতে না পারে সে জন্য নিয়মিত মোবাইল কোর্ট করতে হবে। এছাড়া ওভারলোড পরিহারের জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।
সকল বাজার এলাকায় সুনির্দিষ্ট পার্কিং এরিয়া রাখতে হবে। রাস্তায় পাশের অবৈধ সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে।
সম্ভব হলে অটো রিকশা বা অটো বাইক এর জন্য আলাদা লেন চিহ্নিত করে দিতে হবে।
রাস্তার উপর যত্রতত্র বৈদ্যুতিক খুঁটি, বালু, পাথর, কয়লা, খড় ইত্যাদি স্তুপ করে রাখা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেউ এরকম করলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। রাস্তায় গরু ছাগল চরানোর ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
রাস্তায় বিকল হওয়া যানবাহন নিরাপদ দুরত্বে রাখতে হবে এবং বাহনের পিছনে রিফ্লেক্ট স্টিকার লাগাতে হবে। প্রতিটি গাড়ি বা যানবাহনের পিছনে রিফ্লেক্ট স্টিকার লাগালে রাতের বেলায় অনেকাংশে দুর্ঘটনা কমানো যাবে।
রাস্তার দুই পাশে পার্শ্ব লাইন ভালো করে রং করে পঞ্চাশ বা একশো ফুট পরপর রোড স্টাড বসালে যানবাহন আউট লাইন হবে না।
এক জরিপে জানা যায় মোট দুর্ঘটনার ৩০ শতাংশ সংঘটিত হয় পথচারীদের কারণে। পথে চলার নিয়ম না জানার কারণে তারা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। আমাদের দেশে গাড়ি চলে রাস্তার বাম পাশ দিয়ে এবং পথচারীও হাঁটেন বাম পাশ দিয়ে ফলে পেছন থেকে আঘাতজনিত কারণে তারা দুর্ঘটনার শিকার হয়। তারা যদি ডান পাশ দিয়ে হাঁটত তাহলে পেছন থেকে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা কম থাকত। কারণ ডান পাশ ব্যবহার করলে পেছনে কোনো গাড়ি থাকে না, গাড়ি থাকে পথচারীর সম্মুখভাগে। রাস্তা পারাপারের নিয়ম হলো প্রথমে ডানে তাকাতে হবে, তারপর বামে, পরিশেষে ডানে তাকিয়ে রাস্তা পার হতে হবে। কোনো অবস্থাতেই অন্যমনস্ক হয়ে কিংবা দৌড়ে বা মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হওয়া যাবে না।
হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগের পুলিশকে আরোও তৎপর হতে হবে। অভিযোগ রয়েছে হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ শুধু টোকেন বানিজ্য ও চাদাবাজীতে লিপ্ত থাকেন।
পরিশেষে বলতে চাই নিরাপদ সিলেট -তামাবিল সড়কের জন্য সড়ক পরিবহণ আইন এর যথাযথ প্রয়োগ এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্বশীল হতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Latest from Blog

x
English version