
সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ কর্তৃক জাফলংয়ে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর ও ক্লু-লেস “পর্যটক আলে ইমরান হত্যা” মামলার রহস্য উন্মোচন; হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত ২জন আসামী গ্রেফতার।
১৭ এপ্রিল বিকালে গোয়াইনঘাট থানার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের জাফলং বল্লাঘাট রিভারভিউ রিসোর্টের পাশে অজ্ঞাত নামা যুবকের লাশ পাথর চাপা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন ৷ থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
পরবর্তীতে জানা যায় ভিকটিমের পরিচয় সনাক্ত করে পুলিশ৷ কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী থানার গুরই গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে আলে ইমরান (৩২)৷ হত্যাকান্ডের ঘটনায় ১৮ এপ্রিল অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়৷ পর্যটক হত্যার ঘটনায় জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয় যা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
পর্যটক হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত আসামিদের শনাক্তকরণ ও গ্রেফতারে পুলিশ অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। ১৯ এপ্রিল রাতে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ এবং জেলা গোয়েন্দা শাখা কর্তৃক পৃথক দুটি অভিযানে চাঞ্চল্যকর পর্যটক হত্যা মামলার অন্যতম আসামী নারায়নগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ থানার দাউদপুর ইউনিয়নের বেলদি গাজীরটেক গ্রামের মো. জিন্নাত এর ছেলে নাদিম আহমেদ নাঈম (১৯), কে নিজ বাড়ি হতে গ্রেফতার করা হয় এবং হত্যা মামলার অন্যতম আসামী কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী থানার গুরই ইউনিযনের ছেত্রা গ্রামের মৃত আব্দুছ ছাত্তাের মেয়ে নিহত পর্যটক আলে ইমরানের স্ত্রী খুশনাহার(২১) কে ঢাকা বসুন্ধরা এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানায় প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে ভিকটিম আলে ইমরান এর স্ত্রী খুশনাহার এর সাথে হত্যা মামলার অন্যতম পলাতক আসামী মাহিদুল হাসান মাহিন(২৪) এর দীর্ঘ দুই থেকে আড়াই বছরের প্রেম। আসামী মাহিন ঢাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জিএম পদে কর্মরত। ভিকটিম আলে ইমরানের সাথে গত পাচঁ বছর আগে খুশনাহারের বিয়ে হয়। মাহিনের সাথে প্রেমে জড়ানোর পর থেকেই ভিকটিমের স্ত্রী খুশনাহার এবং তার প্রেমিক মাহিন বিভিন্ন সময় ভিকটিম আলে ইমরান কে হত্যা করার চেষ্টা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় হত্যা করার উদ্দেশ্যে খুশনাহার তার স্বামী ভিকটিম আলে ইমরান কে বেড়ানোর কথা বলে গত ১৫ এপ্রিল রাতে ভৈরব হতে ট্রেন যোগে সিলেটের উদ্দেশ্য রওয়ানা করে। অন্যদিকে একই দিনে প্রেমিক মাহিন ও মাহিনের অফিসে কর্মরত গ্রেফতারকৃত আসামি নাদিম এবং অপর পলাতক সহযোগী ঢাকা কমলাপুর হতে ট্রেন যোগে সিলেট এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে।
১৬ এপ্রিল সকাল আনুমানিক ৭টায় জাফলং বল্লাঘাটস্থ “রিভারভিউ রিসোর্ট এন্ড আবাসিক হোটেল” এর ১০১ নং কক্ষে ভিকটিম আলে ইমরান এবং তার স্ত্রী খুশনাহার অবস্থান করেন এবং অন্য তিন আসামি জাফলং বল্লাঘাট এ হোটেল শাহ আমিন এ অবস্থান করেন।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিমের স্ত্রী খোশনাহার হত্যা কান্ড সংঘটনের পূর্বেই কৌশলে তাদের অবস্থানরত হোটেল রুমের সামনের সিসিটিভি ক্যামেরা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেয়। পরবর্তীতে মাথা ব্যাথার ঔষধ এর কথা বলে রাত ১০টার সময় ভিকটিম আলে ইমরানকে তার স্ত্রী খুশনাহার ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর যখন ভিকটিম আলে ইমরান ঘুমিয়ে যান তখন স্ত্রী খুশনাহার তার প্রেমিক মাহিন কে হোটেল রিয়ারভিউ রিসোর্ট এন্ড আবাসিক হোটেল এ আসার জন্য বলেন। রাত আনুমানিক ১২টায় সময় হত্যাকারী মাহিন তার অপর দুই সহযোগীকে নিয়ে হোটেল রিয়ারভিউ এর ১০১ নং কক্ষে প্রবেশ করে এবং রাত অনুমান ২টায আলে ইমরানের স্ত্রী খুশনাহার এবং প্রেমিক মাহিন গলায় গামছা পেচিয়ে ভিকটিম আলে ইমরান কে হত্যা করে। এই সময় গ্রেফতারকৃত অপর আসামি নাদিম আলে ইমরানের পা চেপে ধরে এবং পলাতক অপর সহযোগী রুমের বাহিরে পাহারাদেয়। একসময় ভিকটিম আলে ইমরান এর মৃত্যু নিশ্চিত হলে আনুমানিক রাত্রী ৩টায় হত্যাকারী মাহিন ও অপর দুই সহযোগী ভিকটিম আলে ইমরানের মৃতদেহ লুকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে হোটেলের পাশে পাথর চাপা দিয়ে রাখে। পরবর্তীতে হত্যাকারীরা হোটেল থেকে রাত আনুমানিক ৪টা সময় বের হয়ে সিএনজি যোগে সিলেট পালিয়ে যায়।
প্রাথমিক ভাবে গ্রেফতারকৃত আসামীরা উক্ত হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে। হত্যাকান্ডে জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জেলা পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনে জানান৷