
কক্সবাজারের পর্যটন উন্নয়নে বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়ে সর্বশান্ত হওয়ার অভিযোগ করেছেন সাবেক এক সেনা কর্মকর্তা।
আরএফ বিল্ডারর্স নামে এক ডেভলাপার কোম্পানিতে ২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হন এবং চুক্তি মতো ফ্ল্যাট বুঝে নিতে গিয়ে হামলা ও মামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। একই ভাবে প্রতারিত হয়েছে পর্যটন উন্নয়নে জমি দেওয়া মালিকও।
বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেছেন মেজর দেলোয়ার হোসেন খান (অব.)। তিনি ওয়েসিস হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
তিনি বলেন, আরএফ বিল্ডারর্স নামে এক কোম্পানির মালিক হাজী দেলোয়ারের সঙ্গে ২০১১ সালে কক্সবাজারে যৌথ ব্যবসার একটি চুক্তি হয়। উভয়ে মিলে ‘ওয়েসিস হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট’ নামে পাঁচ তারকা মানের ১৪ তলা বিল্ডিং প্রকল্প হাতে নিয়েছিলাম। যেখানে আমার কোম্পানি প্রায় ২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে এ প্রকল্পের জমিতে ভবন নির্মাণে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) ও জেলা প্রশাসনের কোনো অনুমোদন ছিল না। এ তথ্য গোপন করে প্রতারণা করেছেন হাজী দেলোয়ার।
দেলোয়ার বলেন, হাজী দেলোয়ারের মিষ্টি কথায় আমি পর্যটন খাতে বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছি। ছয় মাসের মাথায় আমার মূলধন ফেরত দেওয়ার কথা বলে পাঁচ বছরেও মূলধন ফেরত না পেয়ে আমাদের অন্যান্য প্রকল্পগুলো অর্থাভাবে থমকে যায়। ফলে কোটি কোটি টাকার ঋণ খেলাপি এবং প্রচণ্ড অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে পড়েছে আমার কোম্পানি।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে ১ জুলাই হাজী দেলোয়ার ‘ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট ডেভলপমেন্ট’এর সঙ্গে আমার ২০০ রুম ভাড়া চুক্তি হয়। ২০২৮ পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদে হোটেলের প্রতিটি রুমের সৌন্দর্য বর্ধনে আমি আরও কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করেছি। কিন্তু ফ্লাটের প্রকৃত মালিকদের সঙ্গে আমাকে চুক্তি করিয়ে না দিয়ে নিজের ইচ্ছে মতো ভাড়া তুলে টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। এতে আমি যেমন প্রতারিত হচ্ছি তেমনি প্রকৃত ফ্লাট মালিকরাও ভাড়া পাচ্ছেন না।
কান্না জড়িত কণ্ঠে সাবেক সেনা কর্মকর্তা বলেন, তিনি শুধু আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন এমন নয়, আমার চুক্তির পর জনৈক কুদ্দুস এবং চার জন অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তদের সঙ্গেও চুক্তি করেন। এরা ছাড়াও আরও দুজনের সঙ্গে চুক্তি করেন। যা ছিলে শুধুই প্রতারণা।
সংবাদ সম্মেলনে ল্যান্ড ওনার অ্যাডভোকেট আশরাফুল আলম বলেন, আমি জমির মালিক। আমাদের সঙ্গে ৩০ থেকে ৭০ শতাংশের মালিকানা চুক্তি হয়। অথচ হোটেলে কোনো দুর্ঘটনা হলে হাজী দেলোয়ার আমাকে জড়িয়েও মামলা করেন। পর্যটন শিল্প বিকাশে আমরা জমি দিয়ে এখন মামলার আসামি হচ্ছি।
এছাড়া সাবেক মেজর দেলোয়ারের শ্যালক হামলার শিকার হলে তাকে হাসাপাতালে নিয়ে যাই। উল্টো প্রতারক হাজী দেলোয়ার আমাদের নামে মিথ্যা মামলা করেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে হোটেল ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের মালিক হাজী দেলোয়ার বলেন, ২০১৮ সালে মেজর দেলোয়ারকে চুক্তিতে দু’শত ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়েছিলাম। চুক্তির পর কয়েকমাস ভাড়া ও ভ্যাট পরিশোধ করলেও পরে তা বন্ধ করে দেয়। নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ না করায় তিন কোটি টাকার ওপরে ভাড়া ও ভ্যাটের টাকা বকেয়া পড়ে যায়। চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করায় আইনি প্রক্রিয়ায় তিনবার লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশের জবাব না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা করে ফ্ল্যাট বুঝে নিয়েছি।