//

সার্টিফিকেট আনতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন মিমি

19 mins read

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএইউ) কৃষি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আফসানা মিমি(২৫)। পড়াশোনা শেষ তাই ময়মনসিংহ যাচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট আনতে। তার ইচ্ছা ছিল বিসিএস ক্যাডার হয়ে পরিবারের হাল ধরবেন। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা কেড়ে নিল মিমির প্রাণ। এদিকে মা ফিরে আসবে বলে পথ চেয়ে বসে আছে নিহত মিমির এক বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে।

রবিবার (১৯ মার্চ) ভোরে গোপালগঞ্জের পুলিশ লাইন থেকে বাকি আরও অনেকের সঙ্গে ঢাকায় যাওয়ার জন্য ইমাদ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন আফসানা মিমি। পথিমধ্যে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় বাসটি পৌঁছালে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় ৫০ ফুট নিচে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে নিহত হন মিমি। তিনি গোপালগঞ্জ শহরের ব্যাংকপাড়া এলাকার হিরাবাড়ি রোডের মৃত আবু হেনা মোস্তফা নীল সর্দারের মেয়ে।

জানা গেছে, মিমির বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। ছোট থাকতেই বাবাকে হারান মিমি। দুই বোনের মধ্যে তিনি বড়। ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন মিমি। তিন বছর আগে বিয়ে হয় তার। এক বছর বয়সী একটা মেয়ে রয়েছে তার। মায়ের কাছে মেয়েকে রেখে যাচ্ছিলেন সার্টিফিকেট আনতে।

নিহত মিমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বশেমুরবিপ্রবির সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন। কৃষি বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করে ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি। মিমির এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না তার পরিবারের কেউ।

নিহতের চাচাতো ভাই অ্যাডভোকেট এস আর রহমান জানান, মিমি পরিবারের বড় মেয়ে। তার ইচ্ছা ছিল বিসিএস পরীক্ষা দেবে তাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট আনতে সকালে গোপালগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্য রওনা হয়। ময়মনসিংহের যাওয়ার জন্য গোপালগঞ্জ থেকে সরাসরি কোনো গাড়ি না থাকায় ঢাকার একটি বাসে ওঠে। পথিমধ্যে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় বাসটি পৌঁছালে এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় ৫০ফুট নিচে পড়ে যায় বাসটি। এতে ঘটনাস্থলে নিহত হয় মিমি।

তিনি বলেন, মিমির মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। আমাদের কাছে হস্তান্তর করলে মরদেহ নিয়ে আমরা বাড়ি ফিরব। মেয়েটি সার্টিফিকেট আনতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরল।

এর আগে রবিবার (১৯ মার্চ) সকালে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহনের একটি বাস খাদে পড়ে ২০জন নিহত ও আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০জন।
দুর্ঘটনায় শনাক্তকৃত নিহতরা হলেন- গোপালগঞ্জের ত্রিনদী রঞ্জন মন্ডল(৫০), গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের আমজাদ আলীর ছেলে মাসুদ মিয়া(৩২), খুলনার সোনাডাঙ্গার শেখ আহমদ মিয়ার ছেলে শেখ আব্দুল আল মামুন(৪০), গোপালগঞ্জ সদরের হেদায়েত মিয়া (৪৫), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত (ইংরেজি) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী গোপালগঞ্জ সদরের মাসুদ মিয়ার মেয়ে সুইটি আক্তার(২০), লোহাগাড়া নড়াইলের বকু শিকদারের ছেলে ফরহাদ হোসেন(৫০), গোপালগঞ্জ সদরের মাসুম মিয়ার ছেলে মোস্তাক শেখ(৪০), গোপালগঞ্জের টুংগীপাড়ার কাঞ্চন শেখের ছেলে শেখ কবির হোসেন(৫৫), ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী গোপালগঞ্জ সদরের আবু হেনা মোস্তফার মেয়ে আফসানা মিমি(২৪), গোপালগঞ্জ সদরের সজীব(২৬) এবং ফরিদপুর আলফাডাঙ্গার শহীদ মুরাদ আলির ছেলে মোহাম্মদ ইসমাইল। বাকিদের নাম-পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি।
শিবচর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু নাঈম মো. মোফাজ্জেল হক তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Latest from Blog

x
English version