শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী সীমান্ত দিয়ে ভারত হতে দেশে ফেরা গৃহবধূকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (২৬ মার্চ) সকালে বাংলাদেশে প্রবেশের পর হরিনগর এলাকা হতে ধাওয়া করে তাঁকে বহনকারী মোটরসাইকেল আটক করা হয়। সীমান্তবর্তী কালিঞ্চি গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার তেড়লী গ্রামের বাসিন্দা। পারিবারিক কাজে প্রতিবেশী আরেক নারী সহ এলাকার আরও তিন ব্যক্তির সঙ্গে তিনি দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসেন।
ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ জানান, কলকাতার মাটিয়াবুরুজ এলাকায় স্বামীর সঙ্গে তিনি দিনমজুরের কাজ করেন। দালালের সহায়তায় ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে যশোরের এক নারী (৩৬) ও তিনি শনিবার ভোরে কৈখালী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এ সময় অন্য এলাকার আরও তিন শ্রমিক তাঁদের সঙ্গে ছিলেন।
ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ করেন, চোরাই পথে নৌকাযোগে কালিন্দী নদী পার হলে স্থানীয় একটি ক্লাবের ছেলেরা তাঁদের আটক করে। দুই হাজার টাকা চুক্তিতে ছেড়ে দেওয়া হলেও ছোট ভেটখালী এলাকা হতে আব্দুল্লাহ নামের এক ব্যক্তি ধাওয়া করে তাঁদের পাঁচজনকে বহনকারী দুটি মোটরসাইকেল আটকে দেয়। এ সময় নিজেকে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের সোর্স দাবিকারী আব্দুল্লাহ তাঁদের কোস্টগার্ড ও বিজিবির হাতে তুলে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোটরসাইকেল দুটি নিজের বাড়িতে নেওয়ার চেষ্টা করে।
গৃহবধূ আরও বলেন, চালকের বুদ্ধিমত্তায় অপর তিনজনকে বহনকারী মোটরসাইকেলটি স্থানীয় ইউপি সদস্যের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। কিন্তু আব্দুল্লাহ তাঁদের দু’জনকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। এ সময় বিজিবির হাতে তুলে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আব্দুল্লাহ ও তাঁর স্ত্রী কৌশলে তাঁদের ব্যবহৃত স্বর্ণালংকার ও সেলফোন নিয়ে নেয়। সকাল ৮টার দিকে বিজিবি আসছে বলে আব্দুল্লাহ তাঁদের নিজ বাড়ি হতে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে আরেক বাড়িতে নিয়ে সঙ্গের নারীকে আটকে রেখে তাঁকে ধর্ষণ করে। সকল ১১টার দিকে স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধারের পর তাঁদের মাধ্যমে বিষয়টি তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানান।
রমজাননগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আজগর আলী বুলু জানান, সকাল ৭টার দিকে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল যোগে তিন ব্যক্তি তার বাড়িতে আসেন। একই সময়ে স্থানীয় চোরাকারবারি আব্দুল্লাহ বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যদের নিয়ে তার বাড়িতে প্রবেশ করে ওই তিনজনকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সীমান্তের প্রায় তিন কিলোমিটার ভেতরে এবং আশ্রয় গ্রহণকারীরা দেশে ফেরা শ্রমিক নিশ্চিত হয়ে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা চলে যায়।
জনপ্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনজনকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। কিন্তু আব্দুল্লাহর সঙ্গে নিয়ে যাওয়া দুই নারীর সঙ্গে খারাপ আচরণের কথা তিনি পরে শুনেছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভারতের শমসেরনগর ও বাংলাদেশের কালিঞ্চি মুজিব কেল্লা রুটে সাম্প্রতিক সময়ে দালালেরা অবৈধ ভাবে মানুষ পারাপার করছে। স্থানীয় কিছু চোরাকারবারি এই রুটে মাদকদ্রব্য পারাপারের পাশাপাশি অবৈধ ভাবে যাতায়াতকারীদের সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে।
আব্দুল্লাহ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সব অভিযোগ মিথ্যা, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। ঘটনার শিকার নারী সহ জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা তাঁর সংশ্লিষ্টতার কথা জানিয়েছে বললে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
রমজাননগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ আল মামুন জানান, কয়েকজন শ্রমিক চোরাইপথে দেশে ফিরেছে বলে ইউপি সদস্য তাঁকে জানালে তিনি তাঁদের নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন।
শ্যামনগর থানার ওসি কাজী ওয়াহিদ মুর্শেদ বলেন, এ ব্যাপারে তাঁকে কেউ কিছু জানায়নি।