দুই মেয়াদে টানা ১০ বছর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের পর আজ বঙ্গভবন ছেড়ে যাচ্ছেন মো. আবদুল হামিদ।
রাষ্ট্রপতির দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদায়ী রাষ্ট্রপতিকে বঙ্গভবনের সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে বিদায় জানানো হবে। বঙ্গভবনে আজ সোমবার বেলা ১১টায় শপথ নেবেন নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
শপথ অনুষ্ঠান শেষে বঙ্গভবন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানানো হবে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে। আবদুল হামিদ তাঁর উত্তরাধিকারী মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব হস্তান্তরের পর আজই ঢাকার নিকুঞ্জ এলাকায় তাঁর নিজের বাড়িতে উঠবেন। তিনতলা এই বাড়িতে আসবাবসহ সব সরঞ্জাম দিয়ে বসবাসের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে এবং নেওয়া হয়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থা।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বঙ্গভবনের দরবার হলে শপথ গ্রহণের পরপরই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ার বদল করবেন। এর মধ্য দিয়ে মো. সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হবেন।
শপথ অনুষ্ঠানের পর নতুন রাষ্ট্রপতি এবং বিদায়ী রাষ্ট্রপতি অতিথিদের নিয়ে চা–চক্রে মিলিত হবেন। এসব অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অতিথিরা বিদায় নেবেন। এরপর বঙ্গভবন থেকে নতুন রাষ্ট্রপতি যাবেন তাঁর গুলশানের বাসায়। শপথ অনুষ্ঠান শেষে অতিথিদের বিদায় দেওয়ার পর বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ যাবেন ক্রেডেনশিয়াল গ্রাউন্ডে। এবার বঙ্গভবন থেকে তাঁর বিদায় নেওয়ার পালা। বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল গ্রাউন্ডে আবদুল হামিদকে গার্ড অব অনার দেবে প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড রেজিমেন্ট।
সেখান থেকে বিশেষভাবে সাজানো একটি খোলা জিপ সদ্যসাবেক রাষ্ট্রপতিকে বহন করবে। এই গাড়ির সামনে দুই পাশে দুটি রশি বাঁধা থাকবে। বঙ্গভবনের সামরিক–বেসামরিক কর্মকর্তারা দুই ভাগ হয়ে গাড়ির সামনে রশি ধরে দাঁড়াবেন। তখন সদ্যসাবেক রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে গাড়ি চলতে শুরু করবে। খোলা জিপটি সদ্যসাবেক রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে ক্রেডেনশিয়াল গ্রাউন্ড থেকে বঙ্গভবনে প্রধান ফটকের দিকে যাওয়ার সময় সামরিক–বেসামরিক কর্মকর্তারা গাড়ির রশি টেনে নিয়ে যাবেন এবং ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে বিদায় জানাবেন।
বঙ্গভবনের প্রধান গেটে প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড রেজিমেন্ট স্যালুট গার্ড দিয়ে বিদায় জানাবে সদ্যসাবেক রাষ্ট্রপতিকে। সেই খোলা জিপে করেই তিনি বঙ্গভবনের প্রধান গেট থেকে বের হবেন।বঙ্গভবনে প্রধান গেটের বাইরে খোলা জিপ থেকে নেমে আবদুল হামিদ অন্য গাড়িতে উঠবেন। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তাকর্মী আবদুল হামিদকে নিকুঞ্জের বাসভবন পর্যন্ত পৌঁছে দেবেন।
রাষ্ট্রপতির বিদায় অনুষ্ঠানে সেনা ও পুলিশবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর বাদ্যদল বাদ্য বাজাবে। এই প্রথম কোনো রাষ্ট্রপতি এ ধরনের আনুষ্ঠানিক বিদায় অনুষ্ঠান পাচ্ছেন। এর আগে কোনো রাষ্ট্রপতি তা পাননি।
মো. আবদুল হামিদ প্রথম দফায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল শপথ নিয়ে সেদিনই বঙ্গভবনে উঠেছিলেন। যদিও এর আগে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের অসুস্থতার সময় এবং তাঁর মৃত্যুতে জাতীয় সংসদের স্পিকার থাকার কারণে মো. আবদুল হামিদ ৪১ দিন ভারপ্রাপ্ত ও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তবে সে সময় তিনি বঙ্গভবনে ওঠেননি।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পরই তিনি বঙ্গভবনে উঠেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবদুল হামিদ ছাড়া আরও ১৬ জন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আবদুল হামিদ স্বাধীন বাংলাদেশে সাতবার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সংসদে নিজের এলাকা কিশোরগঞ্জের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও স্পিকারের দায়িত্বও পালন করেছেন।
আবদুল হামিদ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন আবদুল হামিদ।