প্রতিবেশীদের অনেকের বাড়িতেই ঈদের আমেজ চলছে। তবে ঈদের আনন্দ নেই টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ার ১৮জেলের পরিবারে।
বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করতে যাওয়ায় দেড় মাস আগে ওই জেলেদের ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি)। এসব জেলের পরিবারে ঈদের আয়োজন তো দূরের কথা, দুই বেলা পেট ভরে খাবারের নিশ্চয়তা নেই এখন।
গত ১৫ মার্চ মঙ্গলবার বিকেলে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথের বঙ্গোপসাগরে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে মাছ শিকার করে ফিরছিলেন ১৮ জেলে। ফেরার পথে চারটি নৌকাসহ তাঁদের ধরে নিয়ে যায় বিজিপি। বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।
মিয়ানমারের বিজিপির হাতে আটক জেলেরা হলেন মোহাম্মদ জসিম, সাইফুল ইসলাম, মো. ফয়সাল, আবু তাহের, মো. ইসমাইল, মো. ইসহাক, আবদুর রহমান, নুর কালাম, মো. হোসেন, মোহাম্মদ হাসমত, মোহাম্মদ আকবর, নজিম উল্লাহ, মোহাম্মদ রফিক, মোহাম্মদ সাব্বির, মোহাম্মদ হেলাল, রেজাউল করিম, মোহাম্মদ রমজান ও মো. জামাল। তাঁরা সবাই টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ার।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৯নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস সালাম বলেন, প্রতিদিন কোনো না কোনো পরিবারের সদস্যরা জেলেদের কোনো খবর আছে কি না জানতে চান। কিন্তু আমি কিছু উত্তর দিতে পারছি না। আজ ৪৫ দিন অতিবাহিত হলেও ধরে নিয়ে যাওয়া ১৮জেলে বর্তমানে কোথায় আছেন, পরিবারগুলো কিছুই জানে না। এ জন্য পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কগ্রস্ত ও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে পরিবারগুলোর সদস্যরা অর্ধাহারে-অনাহারের মধ্যে জীবন যাপন করছেন।
শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়া ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল গনি প্রথম আলোকে বলেন, একটি গ্রামের ১৮জন জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের বিজিপি। তাঁদের পরিবারের সদস্যরা খুবই কষ্টের মধ্যে রয়েছেন। জেলেদের ফেরত পেতে তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
ঈদের কথা জানতে চাইলে অপহৃত জেলে কালামের স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, ঈদ দিয়ে কী হবে, স্বামীকে তো ফেরত পেলাম না। কেমন আছেন, কোথায় আছেন, কে জানে। আমাদের আনন্দ তো মিয়ানমারে আটকা আছে। ছোট মেয়েটি বাবার জন্য প্রতিদিন কান্নাকাটি করছে। তাকে কোনোভাবে বোঝানো যাচ্ছে না।
আরেক জেলে হেলালের মা নুর বেগম বলেন, ঈদের আনন্দের পরিবর্তে এসব পরিবারের সদস্যদের চোখে-মুখে এখন হতাশার ছায়া। ছেলে-মেয়েদের মুখে ঠিকমতো খাবার দিতে পারছেন না। ঈদ দিয়ে কী হবে। পেটে দেওয়ার কিছুই নেই, কেনাকাটা দিয়ে কী হবে। ছোট ছোট শিশুরা পার্শ্ববর্তী মানুষের ছেলে-মেয়েদের নতুন জামাকাপড় দেখে খুবই কান্নাকাটি করছে। কিন্তু হাতে তো কোনো টাকাপয়সা নেই।
১৮ পরিবারের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায় ঈদের কিছু পণ্যসামগ্রী পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন।
জেলেদের ফেরত আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহায়তা চেয়েছেন শাহপরীর দ্বীপ ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মৌলভী মোহাম্মদ আয়ুব। তিনি বলেন, যে জেলেরা অপহৃত হয়েছেন, তাঁরা খুবই গরিব। তাঁদের পরিবারের অবস্থা তেমন ভালো নয়। তাঁরা দিনে আনে দিনে খান। জেলে পরিবার গুলোর জন্য সরকারি ভাবে ঈদের সহযোগিতার দাবি জানান তিনি।
টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার দৈনিক কে বলেন, বিজিবির পক্ষে ওই জেলেদের ফেরত চেয়ে একাধিকবার মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু আজও তাঁরা জেলেদের ফেরত দেয়নি। জেলেদের সবাইকে মিয়ানমার আদালত পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে বলে সেদিনের বিজিপি কর্তৃপক্ষ অবহিত করেছে।
Leave a Reply