///

কানাইঘাট উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারন করছে

18 mins read

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সার্বিক ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। নতুন করে রাতের বেলা ভারি বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা লোভা ও সুরমা নদীর ঢলে ৫ম দিনের মতো উপজেলা সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি ঘটেছে। এই মুহুর্তে গোটা উপজেলার ৯৫ ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

পানি বাড়ার সাথে সাথে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ঝুকিপূর্ণ সুরমা ডাইকে ভেঙ্গে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ২ লক্ষের অধিক মানুষ গ্রামীন রাস্তা-ঘাট ঢুবে যাওয়ার কারনে পানি বন্দী অবস্থায় দুর্বিষহ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাদের কাছে ত্রাণ সামগ্রী সঠিক ভাবে পৌঁছাচ্ছে না। তারা অনাহারে অর্ধাহারে রয়েছেন।

গতকাল বুধবার সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ১৫৯ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যা আগের দিন মঙ্গলবার ছিল ১৪২ সে. মি.। মঙ্গলবার সকালের দিকে পানি হু হু করে বাড়লেও রাতের বেলা পৌর শহরের অধিকাংশ এলাকা থেকে ২ থেকে ৩ ফুট নেমে যায়, কিন্তু মুষলধারে বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারনে বুধবার সকাল থেকে বন্যার পানি আবার বাড়তে থাকে। দুপুর গড়াতে না গড়াতেই কানাইঘাট বাজার বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। উপজেলা রোড থেকে শুরু করে প্রশাসন পাড়ায় তীব্র গতীতে পানি ঢুকতে থাকে।

অনেক এলাকা নতুন করে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়, যা অনেকে বলছেন ২০০৪ সালের বন্যা অতিক্রম করেছে এবারের ভয়াবহ বন্যা। বিশেষ করে কানাইঘাট সদরের সাথে সিলেট শহরের তিনটি যোগাযোগ সড়কের অধিকাংশ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সম্পূর্ণ ভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা ৫ দিন থেকে বন্ধ থাকার কারনে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সংকট দেখা দিয়েছে। ১৭টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি উচু স্থানে অবস্থিত অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে ২ হাজারের অধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার দিনভর উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব, লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউপির বেশ কিছু বন্যা দুর্গত এলাকা স্পিডবোট নিয়ে পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জি। এ সময় তিনি বন্যার্তদের মাঝে শুকনো খাবার ও ত্রাণের চাল বিতরণ করেন। এখন পর্যন্ত সরকারি ভাবে কানাইঘাট উপজেলার বন্যা দুর্গতদের জন্য ৩৯ মেট্রিক টন চাল, কয়েক’শ শুকনো খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা পরিষদের ফান্ড থেকে আরো শুকনো খাবার কিনে বিতরণ করা হবে বলে নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জি জানান। তিনি বলেন, বন্যা হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। উপজেলাবাসী ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। অনেক বন্যা দুর্গত এলাকায় গিয়ে মানুষের দুঃখ দুর্দশা আমি দেখেছি, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। কিন্তু তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে। প্রশাসনের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিরা বরাদ্দকৃত ত্রাণ বন্যা দুর্গতদের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছেন।

এদিকে সচেতন মহল জানিয়েছেন, উপজেলার ৯টি ও পৌর সভার ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করায় ও নৌকার চরম সংকট থাকার কারনে প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাজার হাজার মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে পারছেন না। তাদেরকে দ্রæত সেখান থেকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবী জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Latest from Blog

x
English version