//

কৃষকদের তথ্য দেবে ‘খামারি’

31 mins read

কোন এলাকার মাটি কেমন, কোন এলাকায় কোন মৌসুমে কোন ধরনের ফসল ভালো হবে, ফসল উৎপাদনে কখন কী সার কতটুকু দিতে হবেএসব তথ্য ঘরে বসেই পেয়ে যাবেন কৃষক। এলাকাভিত্তিক এমন সব তথ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে মুঠোফোন অ্যাপখামারি

অবশ্য অ্যাপটি থেকে ঘরে বসে তথ্য পেতে কৃষকের হাতে ইন্টারনেট সংযোগসহ স্মার্টফোন থাকতে হবে। তা না থাকলে তাঁরা উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তাসহ অন্যদের সহায়তা নিতে পারবেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যায়। তবে অ্যাপটি এখনো পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে। ২০২০ সালের নভেম্বরে অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে ছাড়া হয়। আগামী বছর অ্যাপটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ‘ডেভেলপমেন্ট অব উপজেলা ল্যান্ড সুইটেবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড ক্রপ জোনিং সিস্টেম অব বাংলাদেশশীর্ষক প্রকল্পের উপজাত হিসেবে মূলত অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায়ক্রপ জোনিং’ (এলাকাভিত্তিক শস্যবিন্যাস) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বিএআরসি। ২০১৭ সালে নেওয়া প্রকল্পটি ২০২৫ সাল পর্যন্ত চলবে। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এখানে মূলত তিনটি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এলাকাভিত্তিক মাটির ধরনবৈশিষ্ট্য, আবহাওয়াজলবায়ু এলাকাভিত্তিক ফসলের অর্থনৈতিক দিক। তিন ধরনের তথ্য মিলিয়ে করা হচ্ছেক্রপ জোনিং অর্থাৎ কোন এলাকার জমি কোন মৌসুমে কোন ধরনের ফসলের জন্য উপযোগী, এলাকাভিত্তিক কোন ফসল অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক, তা চিহ্নিত করা হচ্ছে।

পাশাপাশি কোন জমিতে কোন ফসলের জন্য কোন ধরনের সার কতটুকু ব্যবহার করা উচিত, সেই তথ্য অ্যাপে যুক্ত করা হচ্ছে। উপজেলা ইউনিয়ন পর্যায়ে কোথায় কোন ফসল ভালো হবে, তার তথ্য থাকছে অ্যাপে। অবশ্য ঘরে বসে এসব তথ্য পেতে কৃষকের হাতে ইন্টারনেট সংযোগসহ স্মার্টফোন থাকতে হবে। তা না থাকলে তাঁরা উপজেলা পর্যায়ে সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তা নিতে পারবেন। প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, অ্যাপটি সার্বিকভাবে কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, নীতিনির্ধারকদের কাজে সহায়ক হবে। গত মাসে কৃষি মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেক্রপ জোনিংখামারিঅ্যাপটি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে বিএআরসি জানায়, এখন পর্যন্ত দেশের ৩০০টি উপজেলায় ৭৬টি ফসলেরক্রপ জোনিংসম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে পাহাড়ি অঞ্চলের ৪০টি, উপকূলীয় অঞ্চলের ৬৯টি, চরাঞ্চলের ৮৬টি, বরেন্দ্র অঞ্চলের ৪০টি, হাওরাঞ্চলের ২৮টি, মধুপুরগড় পলি অঞ্চলের ৩৭টি উপজেলা রয়েছে।

বাকি উপজেলাগুলোতে কাজ চলছে। পরীক্ষামূলকভাবে চলা অ্যাপটি এখন পর্যন্ত ডাউনলোড হয়েছে তিন হাজার বার। প্রকল্প সূত্র জানায়, অ্যাপ নিয়ে ২৫টি উপজেলায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, কৃষক প্রতিনিধি সার ব্যবসায়ীদের নিয়ে ৪০ জনের দল গঠন করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

প্রকল্প সূত্র বলছে, অ্যাপ নিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে মতামত নেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সার ব্যবহার নিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে ভিন্নমত পাওয়া গেছে। কৃষকেরা বলছেন, অ্যাপটিতে যে পরিমাণ সার ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় কম বলে তাঁরা মনে করছেন। কারণ, এর চেয়ে বেশি পরিমাণে সার ব্যবহারে তাঁরা অভ্যস্ত।

অ্যাপটিতে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে বলে মনে করছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। একটি সূত্র জানায়, অ্যাপে মাটির বৈশিষ্ট্যসংক্রান্ত যে তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে, তা মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট থেকে সংগৃহীত। অনেকগুলো উপজেলার সংক্রান্ত তথ্য পুরোনো। তথ্য ২০০৩ সালের আগের। এক দশকে মাটির গুণাবলি বা বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হয়ে থাকতে পারে। অ্যাপে জমির ধরনসংক্রান্ত (উঁচুনিচু) তথ্যের ক্ষেত্রে শাটল রাডার টপোগ্রাফি মিশনের (এসআরটিএম) তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। এখানেও বাস্তব অবস্থার চেয়ে কিছুটা ভিন্ন তথ্য থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রকল্পের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর হাসান মো. হামিদুর রহমান বলেন, কোন এলাকার জন্য কোন ধরনের ফসল উপযোগী, সেখানে সার কতটুকু প্রয়োজন, সে সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে অ্যাপের মাধ্যমে। এখনো পরীক্ষামূলকভাবে অ্যাপটি ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃষক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অ্যাপটি নিয়ে মতামত নেওয়া হচ্ছে।

সংসদীয় কমিটিতে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবস্থাপনা বিবেচনায় অধিক ফসল উৎপাদন উপযোগী এলাকা চিহ্নিত করার মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেক্রপ জোনিংক্রপ জোনিংঅনুযায়ী, ফসল নির্বাচন করে আবাদ করা হলে অধিক ফলন পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কৃষকেরা যাতে অ্যাপটি যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারেন, তা নিশ্চিতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার গত রোববার বলেন, দেশের একেক এলাকায় একেক ধরনের ফসল ভালো হয়। এলাকাভিত্তিক মাটির ধরন, আবহাওয়াজলবায়ুসংক্রান্ত তথ্য হাতে থাকলে কোন এলাকা কোন ফসলের উপযোগী, তা চিহ্নিত করা যায়।

খামারিঅ্যাপের মাধ্যমে কৃষক ঘরে বসেই জানতে পারবেন, তাঁর জমির জন্য কোন ফসলটি ভালো হবে। অ্যাপে ইতিমধ্যে ৩১২টি উপজেলার তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলছে। কর্মকর্তা কৃষকদের প্রশিক্ষণ চলছে। আগামী বছর আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাপটি উদ্বোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অ্যাপটি উদ্বোধন করবেন বলে তাঁরা আশা করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Latest from Blog

x
English version