/////

মেঘলয়ের পাহাড়ের কোলে জৈন্তার লাল শাপলার রাজ্য ঘুরে দেখার উপযুক্ত সময় এখনই

22 mins read

সিলেটের মেঘালয়ের পাহাড়ের কোলে জৈন্তার লাল শাপলার বিলে। লাল শাপলার বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর দূরান্ত থেকে আসেন পর্যটকরা। “পান-পানি-নারী” এই তিনে জৈন্তাপুরী। ঐতিহ্য আর সৌন্দর্যের গভীরতা বোঝাতে স্থানীয় ভাবে এই মিথ প্রচলিত রয়েছে। পান-সুপারিতে আতিথেয়তা সিলেটের সংস্কৃতিরই একটি অংশ। স্বচ্ছ জলের সারি নদী কাছে টানে পর্যটকদের। আর পৌরানিক কাহিনী অনুসারে জৈন্তারাজ্য শাসন করেছেন খাসিয়া রানী জৈন্তেশ্বরী দেবী।

এখানে সবই ছিল প্রমীলা (নারী) শাসিত রাজ্য। পরাক্রমশালী মোগল ও ইংরেজরা কখনো জৈন্তিয়া জয় করতে পারেননি। আজও সিলেট অঞ্চলে এ রাজ্য সম্পর্কে নানা গল্প শোনা যায়, যা রূপকথাকেও হার মানায়। জৈন্তিয়া রাজা বিজয় সিংহের সমাধিস্থল রয়েছে লাল শাপলার বিলে। লাগোয়া মুক্তিযুদ্ধের চার নম্বর সাব সেক্টর মেঘালয়ের মুক্তাপুর। কেবল সৌন্দর্য নয়, সিলেটের জৈন্তাপুরের লাল শাপলার বিল প্রাগৈতিহাসিক ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

স্থানীয়দের মতে, জৈন্তা রাজ্যের রাজা রাম সিংহের মামা বিজয় সিংহকে এই হাওরে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নৌকা ডুবিয়ে মারা হয়েছিলো। সেই স্মৃতিতেই নির্মিত দুইশত বছরের পুরাতন একটি মন্দিরও রয়েছে লাল শাপলার বিলে। লাল শাপলা বিলের অবস্থান বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী মেঘালয়ের সবুজ পাহাড়ের পাদদেশ। স্থানীয় ভাষায়-প্রাকৃতিক ভাবেই চারটি বিল- ডিবি বিল, ইয়াম বিল, হরফকাট বিল ও কেন্দ্রী বিল সহ ৯০০ একর এলাকা জুড়েই লাল শাপলার ‘রাজ্য’।

বিলের ফুটে থাকে অজ¯্র লাল শাপলার রূপে মজে থাকার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আর নৌকা দিয়ে বিলের মাঝখানে গেলেতো কথাই নেই। লতা-পাতা-গুল্মে ভরা বিলের পানিতে ভেসে থাকা লাখ লাখ লাল শাপলার মাঝে আপনার অবস্থান। প্রকৃতির আপন খেয়ালে গড়ে উঠা সৌন্দর্য বুঝি এমনই হয়।

পরিবেশ কর্মী, সহকারী অধ্যাপক মো. খায়রুল ইসলাম জানান, লাল শাপলার বিল কেবল সৌন্দর্যের পরিচয়ই বহন করে না, জৈন্তিয়ার ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। পৌরানিক আমলে নারী শাসিত রাজ্য ছিল এই জৈন্তাপুর। সৌন্দর্যের সঙ্গে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সম্মিলন এই চারচি বিল গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। লাল শাপলার বিলে আসা পর্যটকরা ঐতিহ্যের সঙ্গেও পরিচিত হতে পারছেন। তিনি আরও বলেন, লাল শাপলার বিল সংরক্ষণে উপজেলা প্রশাসন কমিটি করে দিয়েছে। পর্যটন করপোরেশনেরও উচিত বিলের অবশিষ্ট জায়গা কিভাবে অন্তভূক্ত নজর দেওয়া।

স্থানীয় বাসিন্দা সুরক্ষা কমিটির সদস্য মো. আব্দুস শুকুর, সাধারণ সম্পাদক মাসুক আহমদ, ইউপি সদস্য মো. মনসুর আহমদ, ফরিদ উদ্দিন, নুর আহমদ, সাব্বির আহমদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিলেটের জৈন্তাপুর হয়ে জাফলং ঘুরতে যাওয়ার সময় পর্যটকরা লাল শাপলার বিলে ঘুরে যান। অনেকে কেবল লাল শাপলার বিলের সৌন্দর্য দেখতে আসেন। দিন কাটিয়ে দেন এখানেই। প্রতিবছর অসংখ্য পরিযায়ী পাখি আসে এই হাওরে। তার মধ্যে বালিহাঁস, পাতিসরালি, পানকৌড়ী, নীল কন্ঠি, সাদাবক, জল ময়ূর, সহ অসংখ্য প্রজাতীর পাখি দেখা য়ায়।

পৌরানিক জৈন্তিয়ার বর্তমান নাম জৈন্তাপুর। জৈন্তাপুর সদর হতে ১কিলো মিটার সম্মুখে ডিবির হাওর সহ ৪টি হাওর নিয়ে গড়ে উঠেছে লাল শাপলার রাজ্য। সম্প্রতী পর্যটকদের স্বাগত জানাতে প্রকৃতি যেন আপন মহিমায় সাজিয়ে তুলেছে বিল গুলোকে। ভোরবেলা দুর হতে দেখলে মনে হবে প্রকৃতি লাল গালিচা বিছিয়ে পর্যটকদের বরণ করতে হানছানি ডাকছে।

কীভাবে আসবেন লাল শাপলার বিলে :
সিলেট থেকে সিলেট-তামাবিল সড়ক পথে বাস, লেগুনা, সিএনজি চালিত অটোরিকশা অথবা প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসে করে আসতে পারবেন। জৈন্তাপুর উপজেলা সদর ছেড়ে তামাবিল স্থল বন্দরে যাওয়ার আগেই সড়কের ডান পাশে দেখতে পাবেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ডিবির হাওর বিশেষ ক্যাম্পের সাইনে বোর্ড দেখা যাবে। ক্যাম্পের পাশ দিয়ে কাঁচা রাস্তায় প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার পথ পেরোলেই চোখে পড়বে শাপলা বিল। নৌকায় লাল শাপলার বিল ঘুরতে ভাড়া নেবে ৪০০ টাকা। বর্তমান লাল শাপলার বিলে ঘুরে যাওয়ার উপযুক্ত সময় এখনই।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Latest from Blog

x
English version