লালমনিরহাটে পুলিশ হেফাজতে যুবকের মৃত্যু, এসআই প্রত্যাহার

24 mins read

বৈশাখী মেলা থেকে রবিউল ইসলামকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। হাসপাতালে গিয়ে লাশ হন। শিশু সন্তানকে নিয়ে অকূল পাথারে স্ত্রী। ছবি: আজকের পত্রিকালালমনিরহাটে বৈশাখী মেলা থেকে পুলিশের হাতে আটকের ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের মারধরেই রবিউল ইসলাম খান (২৫) নামের ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের হিরামানিক গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ লোকজন দুই দফায় লালমনিরহাট-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে।
গতকাল বৈশাখী মেলায় অভিযানে যাওয়া পুলিশের দলের প্রধান এসআই হালিমুর রহমান হালিমকে আজ শুক্রবার প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন লালমনিরহাট সদর থানার ওসি শাহাআলম।
রবিউল ইসলাম খান হারাটি ইউনিয়নের কাজিরচওড়া গ্রামের দুলাল খানের জ্যেষ্ঠ সন্তান। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন রবিউল। স্থানীয় বাজারে বাবার ফার্নিচার ব্যবসা ও বাড়িতে খড়ির ব্যবসা দেখাশোনা করতেন।
রবিউল ইসলামের বাড়িতে শোকের মাতম। ছবি: আজকের পত্রিকালালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম দাবি করেন, পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে হিরামানিক গ্রামের চরকের থান এলাকায় বসা মেলায় জুয়া চলছে—এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে অভিযানে যায় সদর থানা পুলিশের একটি দল। পরে ধাওয়া করে রবিউলসহ অপর একজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসার পথে গাড়িতেই রবিউল অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি মারা যান।
স্বজন ও এলাকার লোকজন জানায়, রবিউল মারা যাওয়ার খবরে রাতেই হাসপাতালে ছুটে আসেন স্বজনেরা। বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে লালমনিরহাট-রংপুর মহাসড়কের মহেন্দ্রনগর বটতলায় অবস্থান নিয়ে অবরোধ শুরু করেন স্থানীয়রা। সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে, টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ জানান তাঁরা।
এসআই হালিমুর রহমান হালিমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকাবিক্ষুব্ধ লোকজনকে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিতে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশের ভ্যানটি ভাঙচুর করা হয়। ভোর ৪টার দিকে সদর থানার ওসি শাহা আলম ও স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে গিয়ে দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে শুক্রবার সকাল ১০টার মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
আজ বেলা ১১টায় আবারও ওই স্থান অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন স্থানীয়রা। দুপুর ২টার দিকে লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতিকুর রহমান ও সদর থানার ওসি শাহাআলম ঘটনাস্থলে গিয়ে এসআই হালিমুর রহমান হালিমকে প্রত্যাহারসহ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
নিহতের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছেন, বৈশাখী মেলা থেকে রবিউলকে জুয়াড়ি সন্দেহে আটক করে পুলিশ। আটকের পর তাঁকে লাথি, ঘুষিসহ বেদম মারধর করা হয়। এতে রবিউল সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ তাঁকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
দায়ী পুলিশ কর্মকর্তার বিচারের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করেন স্থানীয়রা। ছবি: আজকের পত্রিকারবিউলের চাচি আন্জুআরা বেগম বলেন, ‘আমাদের ছেলে কোনোদিন জুয়া খেলেনি। সে ওই দিন মেলা দেখতে গিয়েছিল বাচ্চার জন্য খেলনা কিনতে। এ সময় পুলিশ আসলে জুয়াড়িরা পালিয়ে যায় তবে রবিউল পালায়নি। পুলিশ জুয়াড়িদের ধরতে না পেরে রবিউলকে মারতে মারতে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এরপর আমরা শুনতে পাই সে মারা গেছে।
রবিউলের মা ছাফিয়া বেগম বলেন, আমার ভালো ছেলেকে পুলিশ পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। যারা মেরেছে আমি তাদের ফাঁসি চাই।
রবিউলের চাচা মনছুর আলী বলেন, আমার ভাতিজা জীবনে জুয়া খেলাতো দূরে থাক, জুয়া কী জিনিস জানে না। পুলিশ তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তার শাস্তি চাই।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সামিরা হোসেন চৌধুরী জানান, রবিউলের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। মরদেহের ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল রিপোর্টের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন লালমনিরহাট সদর থানার ওসি শাহা আলম।
লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা বলেন, এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতিকুল হককে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Latest from Blog

x
English version