চুরি হচ্ছে সাদা পাথর, সৌন্দর্য হারাচ্ছে ভোলাগঞ্জ পর্যটন

23 mins read

সিলেটের সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীর উজানে ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্টে অবস্থিত ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র। সাদা পাথরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এরই মধ্যে দেশের ভ্রমণ পিপাসুদের মন কেড়ে নিয়েছে। সাদা পাথরের আকর্ষণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আনন্দ ভ্রমণ করতে আসেন এখানে। সম্প্রতি রজমান মাসে পর্যটক কম থাকার সুযোগে রাতের আঁধারে চুরি হচ্ছে সাদা পাথর। এতে সৌন্দর্য হারাচ্ছে দেশের অন্যতম প্রকৃতিকন্যা ভোলাগঞ্জ পর্যটন কেন্দ্র।
পাথর চুরির ঘটনায় বুধবার পুলিশ বাদী হয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় ৭ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেছে।
জানাযায় মঙ্গলবার ভোর রাতে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা ও পুলিশের একজন লাইন ম্যানকে চাঁদা দিয়ে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্রের পূর্ব পাড় থেকে পাথর চুরি করে উপজেলার কালাইরাগ ও কলাবাড়ীর এলাকায় ক্রাশার মিলে বিক্রয় করা হয়। চুরি করে পাথর বিক্রয়ের বিষয়ে একাধিক অডিও এবং ভিডিও প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
পর্যটন কেন্দ্রের পাথর চুরি ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে কোম্পানীগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার সুকমল ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে। প্রশাসনের একাধিক ব্যক্তি ও স্থানীয়রা বলছেন গত কয়েক দিন ধরে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর চুরি হচ্ছে। এই ঘটনার সব কিছু থানার এসআই সুকমল ভট্টাচার্য অবগত রয়েছে। তিনি সুযোগ দিয়েছেন বলেই অপরাধীরা সরকারি সম্পত্তি চুরি করতে পেরেছেন। এসব অভিযোগের একাধিক অডিও প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্রটি সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখানের দায়িত্বরত বিজিবিরা যদি পাথর চোরদের সহযোগিতা না করে তাহলে কিভাবে পাথর চুরি হয়। রাতের আঁধারে পর্যটন কেন্দ্র বিজিবির সহযোগীতা ছাড়া কোন ভাবেই কেউ ডুকতে পারবে না।
পর্যটনের পাথর চুরি ঘটনা স্থানীয় সংবাদ কর্মীরা জানতে পেরেছে এমন সংবাদে তুড়িহরি থানা পুলিশ চোরাইকৃত পাথরের একটি ট্রাকক্টর সহ দুই জনকে গ্রেপ্তার করে।
তথ্য অনুযায়ী সরজমিনে কলাবাড়ী এলাকায় অবস্থিত ক্রাশার মিলে গেলে দেখা যায় পাথরবাহী একাধিক ট্রাকক্টর দিয়ে পাথর পরিবহন করে মিলে রাখা হয়েছে।
নামপ্রকাশে অনুচ্ছিক সাদা পাথর পর্যটন স্পটের কাছের বাসিন্দা দৈনিক সিলেট মিরর কে জানান, ইদানীং রাতের আঁধারে পর্যটন স্পটের পাথর চুরি করে একটি প্রভাবশালী মহল পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য নষ্ট করছে। এভাবে যদি সাদা পাথর চুরি করা হয় তাহলে কয়েক মাসের মধ্যে পর্যটন কেন্দ্রের সকল পাথর শেষ হয়ে যাবে। এতে করে ভ্রমণ পিপাসুরা এখানে আসার আগ্রহ হারাবে তেমনি ভাবে পর্যটন সংশ্লিষ্ট কর্মজীবীরা বেকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় একজন সংবাদকর্মী বলেন, কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি নবাগত হওয়ায় তিনি কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই ওসি সাহেবেকে লুকিয়ে কিছু অসাধু কর্মকর্তা অপরাধীদের সহযোগীতা করছেন।
অভিযুক্ত থানার সেকেন্ড অফিসার সুকমল ভট্টাচার্য দৈনিক সিলেট মিরর কে ভোলাগঞ্জ পর্যটন কেন্দ্র থেকে পাথর চুরির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রাতের আঁধারে পাথর চুরি খবর পেয়ে থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে পাথর পরিবহনের গাড়ী সহ সংশ্লিষ্ট আসামীদের আটক করেছি এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে। অপরাধীদের সাথে আমি জড়িত হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী দৈনিক সিলেট মিরর কে বলেন, পাথর চুরি ঘটনায় মামলা হয়েছে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনাই হচ্ছে পুলিশের কাজ। কেউ যদি অপরাধীদের সহযোগিতা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং দৈনিক সিলেট মিরর কে জানান, পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা ও রক্ষা করা প্রশাসনের কাজ। পর্যটন স্পটের সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য উপজেলা প্রশাসনের সকল দপ্তর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) লুৎফর রহমান দৈনিক সিলেট মিরর কে জানান, পাথর চুরি ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়েছে শুনেছি তবে পুলিশ সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি জেলা পুলিশের জানা নেই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Latest from Blog

x
English version