সিলেটের ওসমানীনগরে শত বছরের পুরনো বারুনী মেলায় এবারো হাজার হাজার লোক সমাগম ঘটে। বুধবার দুপুর থেকে তাজপুর ছিল মেলায় আসা দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় চৈত্রের প্রচণ্ড তাপদাহ উপেক্ষা করে নারী, শিশু থেকে শুরু করে সকল বয়সের মানুষ এতে উৎসাহ ভরে অংশ নেয়।
ইতিহাস খুজে জানা যায়, সনাতন ধর্মালম্বী প্রতি বছর দোল পুর্ণিমা তিথিতে শত বছর আগে বুড়ি-বরাক নদীতে পুণ্যøান করতেন। মহাভারতে বর্ণিত বুড়ি-বরাক নদী গঙ্গার সাথে যুক্ত। গঙ্গা হচ্ছে পাপ মোচনকারী নদী। পুর্ণিমা তিথিতে গঙ্গার জোয়ারের পানি বুড়ি বরাক নদীতে এসে মিলিত হয়। সঙ্গত কারণেই যারা গঙ্গা নদীতে স্নান করতে অক্ষম তারা বুড়ি বরাক নদীতে স্নান করতেন। গোয়ালাবাজার, তাজপুর, বোয়ালজুর, বুরুঙ্গা প্রভৃতি মোহনায় হাজার হাজার মানুষ øান করতেন। তাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি যোগানের লক্ষ্যে মেলার শুরু হয়। আর তখন থানার বাজার (বর্তমানে তাজপুর বাজার) সবচেয়ে বেশী লোক সমাগম ঘটতো। সেখানের বারুনীর মেলা ছিলো সিলেট বিখ্যাত। দক্ষিনে ঢাকা দক্ষিন মহাপ্রভূর মেলা আর তাজপুরের বারুনী মেলা হচ্ছে সিলেটের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী মেলা। বর্তমানে বুড়ি বরাক নদী ইতিহাস থেকে প্রায় হারিয়ে গেলেও ইতিহাসের পথ ধরে সে মেলা এখনো অনুষ্ঠিত হয়। তবে আগে মেলা একটানা ৭দিন ধরে চললেও বর্তমানে তা সীমিত আকারে (১দিনে) এসে ঠেকেছে।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, মাটি, প্লাস্টিক, বেত থেকে শুরু করে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর পসার সাজিয়েছেন দোকানীরা। মেলার পরিসর ছোট হলেও এর মধ্যেই কয়েকশ দোকানের এ মেলায় হাজার হাজার মানুষের উপচে পড়া ভীড় প্রত্যক্ষ করা যায়। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা ব্যস্ত হয়ে উঠে খেলনা ও খাদ্য সামগ্রী কিনতে। মেলা দেখতে আসা ইলাশপুরের নাছিমা (১০) জানায় সে তার বাবার সাথে মেলায় এসেছে। সে প্লাষ্টিকের চশমা, চুড়ি ও খাবার জন্য খই কিনেছে। মেলায় এসে তার ভালো লাগছে। প্রবীণ জব্বার মিয়া (৮৭) বলেন, আগে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসতো। বুড়ি-বরাক নদীতে øান করে যাবার সময় বাড়ীর বাচ্চা ও অন্যদের জন্য বিভিন্ন জিনিস কিনে বাড়ী ফিরত।
মেলায় কেনা বেচা প্রসঙ্গে খেলনা সামগ্রী বিক্রেতা সমর কান্তি বলেন, বিকিকিনি খারাপ না। মেলায় জায়গার অভাব থাকায় আমাদের দোকান নিয়ে বসতে রীতিমত প্রতিযোগীতায় নামতে হয়। মূলত এটা হিন্দুদের মেলা হলেও ধীরে ধীরে তা সর্বজনের মেলায় পরিনত হয়েছে।
তাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অরুণোদয় পাল ঝলক বলেন, পূর্বে বারুনী মেলায় প্রচুর লোকসমাগম হতো। কিন্তু দিন দিন মেলার অানন্দ যেনো কমে যাচ্ছে। এছাড়া জায়গা সংকুলান না হওয়ায় মেলায় বিক্রেতাদের যত্রতত্র বসতে হয়। এতে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের চলচলের বিঘ্ন ঘটে। আগামীতে পরিসর বাড়িয়ে মেলাকে আরও প্রাণবন্ত করতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।