/

তেল যেন কোরবানির গরু, পথে সবাই দাম জানতে চান

21 mins read

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর সাড়ে ১২টা। ক্রেতা-বিক্রেতা আর পথচারীতে গিজগিজ করছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মূল সড়ক। যে যাঁর কাজে ব্যস্ত। সেই ব্যস্ত সড়ক ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন সাদা পাঞ্জাবি পরা এক ব্যক্তি। বয়স পঞ্চাশের কম নয়। তবে তিনি ছিলেন অন্যদের চেয়ে আলাদা। তাঁকে ঘিরে সবার উচ্ছ্বাস-আগ্রহ। কারণ, তাঁর দুই হাতে ছিল সয়াবিন তেলের দুটি বোতল। প্রতি বোতলে পাঁচ লিটার করে ১০ লিটার তেল।
দোকানে তেলের আকাল আর আলোচনা মানুষের মুখে মুখে। ফলে ১০ লিটার তেল নিয়ে রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন এই ব্যক্তি। তাঁকে লোকজন জিজ্ঞাসা করা শুরু করেন, ভাই তেল কত দিয়ে নিলেন? কোন দোকান থেকে কিনলেন? রীতিমতো দাঁড় করিয়ে দাম জানতে চান। আর ওই ব্যক্তি সবাইকে অকপটে দাম বলছিলেন। একপর্যায়ে লোকজন তাঁকে ঘিরে ধরেন। এতে বিরক্ত হয়ে দ্রুত হাঁটা দেন তিনি।
যাওয়ার আগে এক ফাঁকে ওই ব্যক্তি বলেন, তাঁর পরিবারে লোকসংখ্যা অনেক। প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের খাবার রান্না হয়। ফলে মাসে ৮ থেকে ১০ লিটার তেল প্রয়োজন হয়। সবাই যেভাবে দাম জিজ্ঞেস করা শুরু করেছেন, এতে তিনি বিব্রত। বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে তেল পেয়েছেন। দাম পড়েছে প্রতি পাঁচ লিটার ৯৮০ টাকা করে। তবে নাম-ঠিকানা প্রকাশ করতে চাননি তিনি।
দাম জিজ্ঞেস করা কয়েক জন পথচারী মজা করে বললেন, তেলের সঙ্গে ঈদুল আজহার একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেল। ঈদের আগে কোরবানির গরু কিনে নিয়ে যাওয়ার সময় অনেকে দাম জিজ্ঞাসা করেন। এখন তেল কিনে নিয়ে যাওয়ার সময় দাম জিজ্ঞাসা করার চল শুরু হয়েছে। এর আগে পেঁয়াজের দাম উঠেছিল ২০০ টাকায়।
এখন তেলও বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। দেখা যাক, তেল নিয়ে মাতামাতি কত দিন থাকে। তবে বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের দোকানি মারুফ করিমের ঘটনাটা একটু অন্য রকম। আজ বিকেলে তাঁর দোকানে আসেন এক ক্রেতা। পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের একটি বোতল চান। মারুফের কাছে তেল ছিল না। তাই তিনি তেল কিনতে কয়েকটি বড় দোকানে ঢুঁ মারেন। ক্রেতা তখন অপেক্ষায় ছিলেন মারুফের নাহার স্টোরে।
বোতলের গায়ের পুরোনো দাম মুছে নতুন দামে বিক্রি বড় দোকান গুলোতে তেল চাইতে গিয়ে মারুফ পড়েন দামের বিড়ম্বনায়। এক দোকানি তাঁর কাছ থেকে পাঁচ লিটার তেলের বোতলের দাম চান ১ হাজার ১০০ টাকা। আরেক দোকানি দাম হাঁকান ১ হাজার ৫০। পরিচিত আরেক দোকানে গেলে মারুফকে বলা হয়, তুমি পরিচিত, বরাবর ১ হাজার টাকা দিলেই হবে।
তেল তোমার। তেলের বোতলে বডি রেট কী আছে আপনাদের দেখার দরকার নাই, নতুন দামে কেনেন। মারুফ বাড়তি দামে তেল কেনেননি। ফিরে আসেন। ক্রেতাও ফিরে যান খালি হাতে। সন্ধ্যায় তেলের বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে এসব কথা বলেন মারুফ করিম। তিনি বলেন, তেল নেই। ক্রেতারা ফিরে যাচ্ছেন। পরিচিত ক্রেতাদের ফেরাতে হচ্ছে।
নগরের বহদ্দারহাট ও ২ নম্বর গেটের বাজারের অন্য দোকান গুলোতেও তেলের সংকট ছিল। এ দুটি বাজারের দোকানিরা বলেন, ঈদের পর বাজার স্বাভাবিক হয়নি। কোম্পানি বলেছে দু-এক দিনের মধ্যে তেল আসবে। তখন সমস্যা থাকবে না। তবে দাম কত হবে, তা বোঝা যাচ্ছে না।
তেলের সংকট ‘কৃত্রিম ও গুজবীয়’ গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর সয়াবিন ও পাম তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বাজার জাতকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। তাতে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয় ১৯৮ টাকা, যা আগে ছিল ১৬০ টাকা। আর ৫ লিটারের বোতলের দাম ঠিক করা হয় ৯৮৫ টাকা, যেটির আগের দাম ছিল ৭৬০ টাকা। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকা ও খোলা পাম তেল প্রতি লিটার ১৭২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আগে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৩৬ টাকা ও পাম তেলের দাম ছিল ১৩০ টাকা। শুক্রবার থেকে এ দাম বাজারে কার্যকর হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Latest from Blog

x
English version