বগুড়ায় ব্যবসায়ী মান্নানকে গ্রেপ্তারের দাবি সাংবাদিকদের

23 mins read

বগুড়ার আলোচিত পরিবহন ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান আকন্দকে গ্রেপ্তার এবং তাঁর মালিকানায় পরিচালিত অনুমোদনহীন অনলাইন টেলিভিশন ‘শুকরা টিভি’ বন্ধে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সাংবাদিকেরা। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে বগুড়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক যৌথসভা থেকে ওই আহ্বান জানান সাংবাদিকেরা। তাঁদের অভিযোগ, ওই অনলাইন টিভির মাধ্যমে ব্যক্তি আক্রমণ করছেন মান্নান।

পেশাগত দায়িত্ব পালনের জেরে বগুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক ‘জনকণ্ঠ’ এর স্টাফ রিপোর্টার মাহমুদুল আলম সম্পর্কে সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে আবদুল মান্নান আপত্তিকর, কুরুচিপূর্ণ ও মানহানিকর বক্তব্য দেন। এর প্রতিবাদে জেলার সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন ওই যৌথ সভায় বসে। ওই সভা থেকে আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সাংবাদিকেরা বলেন, বিতর্কিত পরিবহন ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান ফেসবুক লাইভে এসে প্রায়ই নানাজনকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে মানহানি ও আপত্তিকর বক্তব্য দিচ্ছেন। তাঁর আক্রমণ থেকে বাদ পড়ছেন না প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী-সাংসদ, ডিসি-এসপি, রাজনৈতিক দলের নেতা, জনপ্রতিনিধিরাও। সবশেষ বগুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহমুদুল আলমকে আক্রমণ করে তথাকথিত ‘শুকরা টিভি’তে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। মানুষের চরিত্র হনন কাজে ব্যবহার করা অবৈধ এই কথিত টিভির সম্প্রচার বন্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

আবদুল মান্নান বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ছিলেন। গত বছর অনুষ্ঠিত বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুণের বেশি ভোট পেয়েছিলেন তিনি। তবে হেরে যান বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী রেজাউল করিমের কাছে। সেই থেকে আলোচনায় আসেন আবদুল মান্নান। সবশেষ গত মঙ্গলবার বগুড়ার স্টেশন সড়কের দুই ফল ব্যবসায়ীকে মারধর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গুঁড়িয়ে দিয়ে জায়গা জবর দখলের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে৷ ব্যবসায়ীকে মারধরের সিসিটিভির ফুটেজ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

সাংবাদিকদের যৌথসভায় বগুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহমুদুল আলম বলেন, আবদুল মান্নান আকন্দ গত মঙ্গলবার শহরের স্টেশন সড়কের পিকে ট্রেডার্স ও জয়ফল ভান্ডারে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে জায়গা দখল করেন। এ সময় তিনি দুই ফল ব্যবসায়ীকে মারধর করেন। ব্যবসায়ীকে মারধরের সিসিটিভির ফুটেজ ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে নিউজ করায় আবদুল মান্নান আমাকে নিয়ে আপত্তিকর ভাষায় বিষোদ্গার করেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, প্রেসক্লাবের সভাপতি বা সাংবাদিক মাহমুদুল আলমের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। তবে ব্যক্তি মাহমুদুল আলমের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। তাঁর দুই ভাই আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। এ কারণে তিনি সাংবাদিকতার প্রভাব খাটিয়ে আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে ঘায়েল করার জন্য সব সময় লেগেই থাকেন।

অনুমোদনহীন অনলাইন টেলিভিশন প্রসঙ্গে আবদুল মান্নান বলেন, অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এই টিভির মাধ্যমে কোনো অপরাধ হয়ে থাকলে রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী যে শাস্তি হবে, সেটাই মাথা পেতে নেবেন তিনি ৷
বগুড়া প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত যৌথ সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক ‘করতোয়া’ সম্পাদক মোজাম্মেল হক। প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেনের সঞ্চালনায় যৌথ সভায় বক্তব্য দেন বগুড়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও ‘করতোয়া’র বার্তা সম্পাদক প্রদীপ ভট্টাচার্য, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রেজাউল হাসান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এএইচএম আখতারুজ্জামান, মিলন রহমান ও আরিফ রেহমান, বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জেএম রউফ, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সভাপতি মির্জা সেলিম রেজা, সাধারণ সম্পাদক গণেশ দাস, বগুড়া ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আসাফ-উদ-দৌলা, সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম, বগুড়া ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাসুদুর রহমান, বগুড়া টেলিভিশন রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মেহেরুল সুজন প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Latest from Blog

x
English version