
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ৪নং শাল্লা ইউনিয়নের অন্তর্গত সাতপাড়া বাজার সংলগ্ন একটি ঘর তৈরিকে কেন্দ্র করে মুজিবুর রহমান ও ইউসুফ আলী গ্রুপের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার ২৭ জুন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ সংঘটিত হয়। এই সংঘর্ষে ২জন নিহত ও পুলিশ সহ অন্তত ১৫জন আহত হন। এরই প্রেক্ষিতে পুলিশের এসল্ট মামলা সহ অপর একটি মামলায় ১০৪জনকে আসামী করা হয়েছে।
পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বুধবার (২৮ জুন) দুপুরে শাল্লা থানা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক রাজীব দে বাদী হয়ে পুলিশ এসল্ট মামলাটি দায়ের করেন। ঐ মামলায় মুজিবুর রহমান সহ ১৯ জনকে আসামী করে এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। পুলিশের দায়ের করা মামলায় উপজেলার কার্তিকপুর গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে মুজিবুর রহমান(৫৫) কে গ্রেফতার করে সুনামগঞ্জ কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে। অপর দিকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিহত হওয়া শাল্লা ইউপির ১ নং ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য হাবিবুর রহমানের স্ত্রী মিনা বেগম বাদী হয়ে কার্তিকপুর গ্রামের নিজাম উদ্দিন সহ ৩৬জন ও অজ্ঞাতনামা আরো ১৪জনকে আসামী করে আরেকটি অভিযোগ শাল্লা থানায় দায়ের করেন।
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, সাতপাড়া বাজারে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি এসল্ট মামলা দায়ের করা হয়। ঐ মামলায় মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে সুনামগঞ্জ কোর্টে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আরেকটি অভিযোগ করেন সাবেক মেম্বার নিহত হাবিবুর রহমানের স্ত্রী মিনা বেগম। এসব মামলায় তদন্তের পাশাপাশি গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে।
এব্যাপারে দিরাই-শাল্লার সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহিদুল হক মুন্সী বলেন, সাতপাড়ায় আপাতত পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। গতকাল সংঘর্ষে ২জন নিহত হন। আমরা এখন শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাতপাড়া বাজারে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করেছি। যেসব অভিযোগ থানায় দায়ের করা হয়েছে এগুলোর তদন্ত চলমান রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৬জুন বিকেলে ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে উপজেলার কার্তিকপুর গ্রামের মুজিবুর রহমান ও ইউসুফ আলী গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। স্থানীয়রা সালিস বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করেন এমনকি শাল্লা থানা পুলিশকেও জানানো হয়েছিল। পরেরদিন ২৭জুন সকাল ৮টায় ৪জন পুলিশ সদস্যকে নিয়ে সাতপাড়া বাজারে যান এসআই আলীম উদ্দিন। সেখানে উভয় পক্ষের মধ্যে তর্ক বিতর্ক সৃষ্টি হয়। তর্ক বিতর্কের এক পর্যায়ে উভয়পক্ষ দেশিয় অস্ত্র নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক শাল্লা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম পুলিশের ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ৯ রাউন্ড গুলি ছুঁড়েন।
প্রসঙ্গত, গতকাল মঙ্গলবার (২৭ জুন) সাতপাড়া বাজার সংলগ্ন জায়গায় কার্তিকপুরের নিকসন মিয়া একটা ঘর তৈরী করার সময় বাঁধা দেন একই গ্রামের মুজিবুর রহমান। নিকসন মিয়া দাবি করেন এটা খাস জায়গায় ঘর তৈরি করছেন, আর মুজিবুর রহমান বলেন এটা তার রেকর্ড জায়গা। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে মারাত্মক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ সংঘটিত হয়। সংঘর্ষে বুকের মধ্যে টেঁটা বিদ্ধ হয়ে কার্তিকপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান(৪৯) নামের একজনের মৃত্যু হয়। তিনি মুজিবুর রহমানের চাচা অত্র ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ছিলেন। অন্যদিকে একই গ্রামের কুদ্দুস মিয়ার ছেলে হেলাল মিয়া(২৫) নামে আরেকজন নিহত হন। তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার পথে হেলাল মিয়ার মৃত্যু হয়। তিনি ইউসুফ আলীর চাচাতো ভাই। এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে শাল্লা থানার সাব-ইন্সপেক্টর আলীম উদ্দিন সহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৫জন আহত হয়। সংঘর্ষে আহতরা নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার বিভিন্ন মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।