তারুণ্য আর বিদেশিতে আস্থা সাইফের

22 mins read

করোনাকালে ফেডারেশন কাপ দিয়েই প্রথম মাঠে গড়াচ্ছে ঘরোয়া ফুটবল। টুর্নামেন্ট শুরু হবে ২২ ডিসেম্বর। নতুন মৌসুম শুরুর আগে প্রথম সারির দলগুলোর প্রস্তুতি নিয়ে ৮ পর্বের ধারাবাহিকের দ্বিতীয় পর্বে আজ থাকছে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের কথা

‘প্লে, প্লে, পাস, ফিনিশ…’
মাঝমাঠ থেকে শুরু করে অ্যাটাকিং থার্ড পর্যন্ত ১০টি পুতুল ডামি ম্যান দাঁড় করানো। ডামির আশপাশে নিজেদের পজিশন অনুযায়ী দাঁড়িয়ে খেলোয়াড়েরা।

কোচ পল পুটের নির্দেশনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ম্যাচ পরিস্থিতি অনুযায়ী অনুশীলন করছেন তাঁরা। মাঝমাঠ থেকে পাসের মালা গেঁথে আসা বল গোলপোস্টে জড়ালে উচ্ছ্বাস, নয়তো হতাশা।

সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন এবার কোচ পল পুট। জর্ডান, গিনি, গাম্বিয়া, বুরকিনা ফাসো ও কেনিয়া জাতীয় দলকে কোচিং করানো পুটের ক্ষুরধার মস্তিষ্ক সাইফের বড় শক্তিও।

তাঁকে দলের খেলোয়াড়দের শক্তিমত্তা ও প্রতিপক্ষ দলের ফাঁকফোকর জানাতে সহকারী কোচ হিসেবে আছেন জুলফিকার মাহমুদ। সঙ্গে স্থানীয় ম্যাচ বিশ্লেষক নাফিস ইসলাম।

হাই প্রোফাইল কোচিং স্টাফের সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তি জিপিএস, ভিডিও ক্যামেরা, ফ্লাকস মিলিয়ে সাইফের অনুশীলনটাকে মনে হয় এলাহি ব্যাপার।

২৮ জনের দল থেকে বিদেশি ৪ জনকে বাদ দিলে স্থানীয়দের গড় বয়স ২২–এর ঘরে। তাই বলে দলটিকে কচিকাঁচার মেলা বলা যাবে না।

কাতারের বিপক্ষে সর্বশেষ বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে জাতীয় দলের তিন গোলরক্ষকের একজন পাপ্পু হোসেন, ডিফেন্ডার রিয়াদুল হাসান, রহমত মিয়া ও ইয়াসিন আরাফাত আছেন সাইফে।

জাতীয় দলে প্রাথমিক স্কোয়াডে ছিলেন দলটির ফরোয়ার্ড ফয়সাল আহমেদ ও আরিফুর রহমান। তারুণ্যনির্ভর দলটিকে আরও একটু পরিপক্ব অবস্থায় পাওয়া যেত, যদি সাইফ ছেড়ে কলকাতা মোহামেডানে যোগ না দিতেন আগের অধিনায়ক ও মিডফিল্ডার জামাল ভূঁইয়া।

জামালের অভাব পূরণ করতে এশিয়ান কোটায় দলে নেওয়া হয়েছে উজবেকিস্তানের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার সিরোজিউদ্দিন রাখমাতুলেভকে।

বিদেশি কোটার চেহারাই বদলে ফেলেছে তারা। পুরোনোদের বাদ দিয়ে নতুনদের দিকে ঝুঁকেছে করপোরেট ক্লাবটি। রাখমাতুলেভ ছাড়া বাকি তিনজনই নাইজেরিয়ার। জন ওকোলি ও ইকেচুকু কেনেথ ফরোয়ার্ড, ইমানুয়েল আরিয়াচুকু ডিফেন্ডার।

২০১২ সালে শেখ জামালে খেলে গেছেন আরিয়াচুকু। ২০১৭ সালে নাইজেরিয়া দলে খেলেছেন ২৬ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার।

স্থানীয় তরুণ ফুটবলার ও ভালো মানের বিদেশিদের রসায়নে পুটের অধীন দুর্দান্ত এক মৌসুম শুরুর আভাস দিচ্ছে তারুণ্যনির্ভর দলটি। এরই মধ্যে তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে সব কটিতেই বড় জয় পেয়েছে বাতিল হওয়া গত লিগের ৬ ম্যাচ শেষে পঞ্চম স্থানে থাকা সাইফ।

রোববার সর্বশেষ প্রস্তুতি ম্যাচে শেখ রাসেলকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে তারা। আগের দুটি ম্যাচে মোহামেডান ও বাংলাদেশ পুলিশ ক্লাবের বিপক্ষে জিতেছে ৩-১ ও ২-০ গোলে।

প্রস্তুতি ম্যাচে দেওয়া মোট আট গোলের দুটি করেছেন স্ট্রাইকার কেনেথ। একটি করে গোল এসেছে রহিমউদ্দিন, রিয়াদুল, সাজ্জাদ হোসেন, আরিফুর, মেরাজ ও জনের পা থেকে।

সহ–অধিনায়ক রহমতের সন্তুষ্টি সেখানেই, ‘আমরা আগে ভালো স্ট্রাইকারের অভাবে ধুঁকেছি। এবার ভালো বিদেশি আসায় গোল পাওয়া নিয়ে সমস্যা হবে না। ওরা (কেনেট ও ওকোলি) গোল করতেও পারে, আবার করাতেও পারে।’

পুটের পছন্দ ৪-২-৩-১ ফরমেশন। পোস্টের নিচে পাপ্পু, সেন্টারব্যাকে রিয়াদুলের সঙ্গে আরিয়াচুকু, রাইটব্যাক রহমত ও লেফটব্যাক ইয়াসিন। ‘ডাবল পিভট’ দুই হোল্ডিং মিডফিল্ডার হিসেবে রাখমাতুলেভ ও মোহাম্মাদ আলামিন, বাঁ প্রান্তে ফাহিম ও ডান প্রান্তে রহিম।

দুজনের মাঝে প্লেমেকার হিসেবে থাকবেন ওকোলি ও ‘নাম্বার নাইন’ কেনেথ। রিজার্ভ বেঞ্চেও থাকছেন শাহেদ, আরিফ, মেরাজ ও জাবেদের মতো পরীক্ষিত তরুণেরা। খাতা–কলমের এই শক্তিমত্তার কথা বিবেচনা করলে দলটিকে শিরোপাপ্রত্যাশীদের কাতারে রাখা যায়।

অধিনায়ক রিয়াদুলও নিজেদের ফেবারিটই ভাবছেন, ‘আমরা শিরোপা লড়াইয়ে থাকতে চাই। আমি মনে করি, আমাদের অন্তত সেরা তিনে থাকার যোগ্যতা আছে। খাতা-কলমে বসুন্ধরার পরই নিজেদের রাখব আমি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Latest from Blog

x
English version