///

৩ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভূমি অধিগ্রহণেই ৩৯০ কোটি টাকার দুর্নীতি : টিআইবি

28 mins read

৩ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ভূমি অধিগ্রহণেই ৩৯০কোটি টাকার দুর্নীতি: টিআইবি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ভূমি অধিগ্রহণেই তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুর্নীতি হয়েছে ৩৯০ কোটি ৪৯লাখ টাকার। এছাড়া জমি দখল ও উচ্ছেদের ঘটনাও ঘটেছে। দুর্নীতির অর্থ নিয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ আরও অনেকে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়।

১১ মে বুধবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদন উপস্থাপন করে সংস্থাটি। কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিকল্পনা, অনুমোদন এবং বাস্তবায়নের নীতিকাঠামো বিশ্লেষণসহ সুশাসনের চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা এই গবেষণার উদ্দেশ্য বলে জানায় টিআইবি।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, পরিচালক শেখ মন্জুর-ই-আলম, নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক (গবেষণা ও পলিসি) মোহাম্মদ রফিকুল হাসান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

সংস্থাটির গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকার জ্বালানি খাতের মহাপরিকল্পনা (পিএসএমপি) নিজেরা প্রস্তুত করতে পারেনি। এই মহাপরিকল্পনা তৈরিতে সরকার বারবার জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) অর্থ গ্রহণ করেছে। আর জাইকা একই প্রতিষ্ঠানকে (টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি-টেপকো) বারবার পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। ফলে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে জাপানের নিজস্ব ব্যবস্থা সম্প্রসারণের স্বার্থে কয়লা এবং এলএনজিকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশের জ্বালানি মহাপরিকল্পনা প্রস্তুত হয়।

টিআইবি বলছে, বরিশাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বাঁশখালী এসএস বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মাতারবাড়ি এলএনজি বিদ্যুকেন্দ্রের ভূমি ক্রয়, অধিগ্রহণ এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ৩৯০ কোটি ৪৯ লাখ টাকার দুর্নীতি-অনিয়ম হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১৫ কোটি ৫৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা, বাঁশখালী এসএস বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২৫৫ কোটি টাকা ও মাতারবাড়ি এলএনজি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১১৯ কোটি ৪৫ টাকার দুর্নীতি হয়েছে। এই অর্থ নিয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এনজিও কর্মী, ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ এবং মধ্যস্বত্বভোগী।

এছাড়া ভারত, চীন, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ায় নির্মিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৩ দশমিক ৪৬ টাকা থেকে ৫ দশমিক ১৫ টাকা পড়ে। কিন্তু বরিশাল কয়লাভিত্তিক ও বাঁশখালী এসএস বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার সুযোগ রেখে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ধরা হয়েছে ২২-৪৯ শতাংশ বেশি দাম।
গবেষণাপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, প্যারিস চুক্তির আওতায় আইএনডিসিতে বাংলাদেশ শর্তহীনভাবে ৫ শতাংশ এবং তহবিল প্রাপ্তি সাপেক্ষে ১৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। প্রস্তাবিত ১৮টি প্রকল্প থেকে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতি বছর ১ লাখ ১০ হাজার টন কার্বন নিঃসরণের আশঙ্কাসহ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৬৩ গুন বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া ২০০৮ সালে জ্বালানি খাত থেকে ৪১ মিলিয়ন টন কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরিত হয়েছে। ২০১৯ সালে তা বেড়ে ৮৯ মিলিয়ন টনে উন্নীত হয়েছে যা ২০০৮ সালের তুলনায় ১১৮ শতাংশ বেশি।

টিআইবির সুপারিশ
১. জ্বালানি খাতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব সংশ্লিষ্টদের বাদ দিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণমূলক উপায়ে প্রস্তাবিত ইন্ট্রিগ্রেটেড অ্যানার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান (আইইপিএমপি) প্রণয়ন করতে হবে। একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপসহ প্রস্তাবিত আইইপিএমপি’তে কৌশলগতভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

২. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ বাতিল করতে হবে এবং ২০২২ সালের পরে নতুন কোনো প্রকার জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থায়ন করার ঘোষণা দিতে হবে।

৩. জ্বালানি প্রকল্প অনুমোদন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন, ঋণের শর্ত নির্ধারণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে হবে এবং এ সংক্রান্ত সব নথি প্রকাশ করতে হবে।

৪. জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের ক্ষতিরোধে এবং জীবন-জীবিকা ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় চলমান ঝুঁকিপূর্ণ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো স্থগিত করে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ কৌশলগত, সামাজিক ও পরিবেশগত সমীক্ষা সম্পাদন সাপেক্ষে অগ্রসর হতে হবে।

৫. আইএনডিসি’র অঙ্গীকার বাস্তবায়নে পরিকল্পনাধীন কয়লা ও এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা জমিতে সোলারসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।

৬. ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া, ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ ও বিতরণ এবং ক্রয় সংক্রান্ত কার্যক্রমে শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে হবে।

৭. প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে সংঘটিত দুর্নীতির তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Latest from Blog

x
English version